শফিউল আজম, পটিয়া (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৯ এএম
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:১৮ পিএম
চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দোহাজারী শঙ্খ নদের পাড়ে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগর মনোরঞ্জন জলদাশ। প্রবা ফটো
হাতে মাস্তুল ও পেরেক নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে একটি দীর্ঘকায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন ৬৫ বছর বয়সি মনোরঞ্জন জলদাশ। হাতের কাছে মাস্তুল পেরেক ছাড়াও আলকাতরাসহ রয়েছে নৌকা তৈরির আরও বেশকিছু অনুষঙ্গ। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী শঙ্খ নদের পাড়েই দেখা মিলল এ নৌকা কারিগরের। নতুন-পুরোনো নৌকা তৈরি ও মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। ব্যস্ত সময়ের কাজের ফাঁকে নৌকা তৈরিতেই নিজের সংসারের স্বপ্ন বুনেন এ কারিগর।
মনোরঞ্জনের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম কাঠগড় এলাকায়। পিতা অশ্বনী জলদাশের হাত ধরেই ১৫ বছর বয়সেই নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজে হাতেখড়ি। পিতার সহযোগী থেকে নিজ জীবিকার তাগাদায় এখন এ পেশাতে ঘুরছে সংসারের চাকা। প্রবহমান শঙ্খ নদের পাড়ে বসেই তৈরি করেন নতুন নতুন নৌকা, স্বপ্ন বুনেন সংসারের। তার পাঁচ কন্যাসন্তানের মধ্যে চার কন্যার বিয়ে দিয়েছেন। এক কন্যা পড়ালেখা করছে। স্ত্রী ঘরের কাজে সহায়তা করেন।
বিগত ৫০ বছর ধরে এ শঙ্খ নদের পাড়ে বসেই তিনি তৈরি করেছেন ছোটবড় সাড়ে তিন শতাধিক নতুন নৌকা। পাশাপাশি পুরোনো নৌকা মেরামতের কাজ করেছেন পাঁচ শতাধিক। প্রতি বছর প্রায় ৫০ মণ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৭-৮টি নতুন নৌকা তৈরি করেন তিনি। প্রতিটি নৌকার দৈর্ঘ্যে ৩৬ ফুট, প্রস্থ ৬ ফুট এবং গভীরতা ১৮ ইঞ্চি বা দেড় ফুটের কিছু কমবেশি হয়ে থাকে।
মনোরঞ্জন জলদাশ জানান, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে (কার্তিক-চৈত্র) চলে নতুন নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজ। নতুন একটি নৌকা তৈরিতে ২২-২৫ হাজার টাকা মজুরি নেন। পাশাপাশি পুরোনো নৌকা মেরামতে ক্ষেত্রবিশেষে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি নেওয়া হয়। প্রতিটি নতুন নৌকা তৈরিতে সময় লাগে ১৫-২০ দিন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শঙ্খ নদের পাড়ে চলে নৌকা তৈরি ও মেরামতে তার ব্যস্ততম কর্মযজ্ঞ। নৌকা তৈরিতে মেহগনি, সুরুজ, চাপালিশ গাছ অন্যতম। তবে চাপালিশ গাছ খুবই দামি ও বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। নৌকাগুলো বিশেষত সবজি আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয় হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, দোহাজারীর শস্যভান্ডার খ্যাত লালটিয়া থেকে দোহাজারী রেলস্টেশনে সবজি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে এ নৌকাগুলো বেশ জনপ্রিয়। শঙ্খ নদ হয়ে পানিপথে সহজে শাক-সবজি আনা-নেওয়ার সুবিধার কারণে গত দুই যুগের অধিক সময় এ নৌকাগুলো ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিদিন শতাধিক নৌকা সবজি আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।