নাজমুল হুদা পারভেজ, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:২৯ এএম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩৪ পিএম
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। প্রবা ফটো
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পল্লী বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল নিয়ে ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করে সমাধান তো পাচ্ছেনই না, উল্টো প্রতিবাদ করলেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোক্তাদের মামলা ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
গ্রাহকদের অভিযোগ, কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (কুড়িলা পবিস) চিলমারী জোনাল অফিসের আওতায় রাজারঘাট তবকপুর গ্রামের গ্রাহক মো. আশরাফুল ইসলামের গত মে মাসের বিল ১২৬৮ টাকা, জুন মাসের বিল ৩৪৩ টাকা, আগস্ট মাসের বিল ৭০৫ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসের বিল ৮১৪ টাকা, অক্টোবর মাসের বিল ১৪২৩ টাকা এবং ডিসেম্বর মাসের বিল ছিল ১৭৬ টাকা। কিন্তু এই বছরের জানুয়ারি মাসে ওই গ্রাহকের বিল করা হয় ৩৮ হাজার ৭২৩ টাকা। যা দুই মাসে পরিশোধের জন্য ১৯ হাজার ৩৬৩ টাকা করে দুটি বিল করা হয়।
এদিকে মুরগির ফার্মের মালিকদের জরিমানা করা হয় ৩ হাজার থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা। উপজেলার মাচাবান্দা নামাচর গ্রামের গ্রাহক এস এম নাজমুল আলমের ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুন মাসের বিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার সর্বোচ্চ বিলের পরিমাণ ৫৮৮ টাকা। কিন্তু ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ৫ হাজার ৮৮ টাকা বিল করা হয়। বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করলে নামমাত্র পরিদর্শন টিম করে কুড়িলা পবিস। ওই টিমের রিপোর্ট অনুযায়ী বিল সঠিক আছে মর্মে গ্রাহককে বিল পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়।
সাপ্তাহিক যুগের খবর সম্পাদক এস এম নুরুল আমিন সরকারের ভাড়া বাসায় অতিরিক্ত বিলের জন্য ডিজিএম বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে, তাকে লিখিত বা মৌখিকভাবে কিছু না জানিয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ডিজিএমকে জানালে তিনি পুনরায় সংযোগ দেন, তবে ওই মাসের বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে পুনঃসংযোগ ফি বাবদ ৬৯০ টাকা বাধ্যতামূলক জমা দিতে হয় গ্রাহককে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ব্যাপক আলোচনা করা হয়। সভায় ডিজিএম গোলাম মোস্তফা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
চিলমারী জোনাল অফিসের আওতায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লখিয়ার পাড়া গ্রামের মো. শেখ ফরিদ গত এপ্রিল মাসের বিল পরিশোধ করেন ১৭ মে। কিন্তু ২৮ মে বকেয়া বিলের কারণে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুৎ অফিস। পরে ৩১ মে বিল পরিশোধ করেন। তখন মে মাসের বকেয়া বিল দেখানো হয় ১০২৪ টাকা। কিন্তু মে মাসের বিলের কপি গ্রাহক হাতে পান জুন মাসে, তাতে বিল ছিল ৩১৯ টাকা। তাহলে ১০২৪ টাকার বিল এলো কীভাবে?
ওই গ্রাহক বলেন, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করা হয়। চিলমারী জোনাল অফিসটি এখন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নতুন সংযোগ নিতে গ্রাহকদের চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এটি একটি সমিতি হওয়া সত্ত্বেও সব গ্রাহক সমান সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না।
হরিপুর এলাকার গ্রাহক গাজী মামুদ বলেন, তার সেচ পাম্প বন্ধ থাকার পরেও প্রতি মাসে বিল দিতে হয়। বিলের কপিও সময়মতো তার হাতে পৌঁছে না। গ্রামের কিছু মানুষের হাতে পুরো গ্রামের মানুষের বিলের কপি দিয়ে দেয়। পরের মাসে জরিমানাসহ বিল দিতে হয়। গত বছর তাকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে স্থানীয়ভাবে কথা বলে ৫৩ হাজার টাকা দিয়ে সংযোগ নিতে হয়।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চিলমারী জোনাল অফিসের ডেপুটি জোনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল বিষয়টি দেখছি বলে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।