শাহিনুর সুজন, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৫ পিএম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৮ পিএম
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় চলছে সাদা সোনা তুলা সংগ্রহের তোড়জোড়। প্রবা ফটো
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় চলছে সাদা সোনা তুলা সংগ্রহের তোড়জোড়। আখ ও ধানসহ অন্যান্য ফসলে অব্যাহত লোকসান ও সেচ সংকটের কারণে এ উপজেলার কৃষকেরা কয়েক বছর ধরে কার্পাস তুলা চাষে ঝুঁকছেন। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৯৫০ জন কৃষক প্রায় ৩২০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন, যা একক উপজেলা হিসাবে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ, বলছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
তুলা বিশ্বব্যাপী ‘সাদা সোনা’ হিসাবে পরিচিত। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বিশ্বের প্রায় ৭৫টি দেশে তুলা চাষ করা হয়। তুলা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০তম হলেও তুলা আমদানিকারক দেশ হিসাবে দ্বিতীয়। দেশের পোশাকশিল্পের প্রয়োজনে বিপুল পরিমাণ তুলা আমাদানির প্রয়োজন হয়।
পদ্মা ও বড়াল তীরের প্রাচীন এ জনপদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। বাঙালির হারানো ঐতিহ্য মসলিন কাপড়ের জন্য মিহি আঁশের কার্পাস তুলার উৎপাদন ও বিক্রির অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল চারঘাট উপজেলা। ব্রিটিশের নীল চাষের কাছে তুলার পরাজয় হলেও বর্তমানে এ অঞ্চলে আবার বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ হচ্ছে।
উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গত বছর আমবাগানের ছয় বিঘা জমিতে তুলা আবাদ করে বিঘায় ১৪-১৫ মণ ফলন পেয়েছিলেন। খরচ পড়েছিল প্রায় ১২ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমেও একই পরিমাণ জমিতে আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে জমি থেকে প্রায় ৩৫ মণ তুলা সংগ্রহ করেছেন। আরো ৫০ মণ সংগ্রহের আশা করছেন তিনি। এবার সরকারিভাবে তুলার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ।
সরেজমিন উপজেলার মিয়াপুর, অনুপামপুর, মুংলি, সরদহ ও নিমপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমবাগান, পেয়ারাবাগান, সবজিক্ষেতসহ নানা ফসলের সঙ্গে সাথি ফসল হিসাবে তুলা চাষ হচ্ছে। এখন চলছে তুলা সংগ্রহের কাজ। কৃষকরা বলছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু শুষ্ক মাটিতে সেচ সংকটে ধান চাষে ভোগান্তি ও নায্য দাম না পাওয়ায় আখ চাষের প্রবণতা কমে গেছে। সেখানে এখন তুলা চাষে আগ্রহ তৈরি হয়েছে কৃষকদের মধ্যে। তুলা দেরিতে ফলন দিলেও লোকসানের আশঙ্কা থাকে না। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা যায় এবং আবাদ শেষে বীজ ও সারের মূল্য পরিশোধ করা যায়।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের চারঘাট ইউনিট প্রধান আব্দুল গফুর বলেন, এখানকার চাষিদের তুলার দেশি বীজ সরবরাহ করেছি। এই বীজে বিঘায় ২১ মণ পর্যন্ত তুলা উৎপাদন হয়ে থাকে। চাষিদের বিজ ও সার কিনতে ঋণ দিয়েছি। আমরা ৩৮০০ টাকা মণ হিসাবে সব তুলা কিনে নিচ্ছি। তুলা বিক্রি করে আবাদের খরচ পরিশোধ করবেন চাষিরা। তুলার চাষ বৃদ্ধি এবং চাষিদের জীবনমান উন্নয়নে এ উপজেলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টিএমএসএস কাজ করছে। টিএমএসএসের ফিল্ড এক্সিকিউটিভ অফিসার মারুফ আহমেদ জানান, বরেন্দ্রের শুষ্ক জমি তুলা চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। এজন্য সাথী ফসল হিসাবে এবং উঁচু জমিতে তুলা চাষ বাড়ছে।
রাজশাহী তুলা উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে চারঘাট উপজেলায় ২৮২ জন কৃষক ৫৮ হেক্টর জমিতে তুলার চাষ করেন। উৎপাদন হয় ৬ হাজার ৫২৫ মণ তুলা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৫৯৪ জন কৃষক ১৭৬ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করে ১৯ হাজার ৮০০ মণ তুলা উৎপাদন করেন, যা আগের চেয়ে তিন গুণ বেশি। এবার ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৫০ জন কৃষক ৩২০ হেক্টর জমিতে তুলার চাষ করেছেন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০০ মণ। তুলার বাজার মূল্য দাঁড়াবে ১৩ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকায়। জেলার নয় উপজেলায় সর্বমোট ৭১৫ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছে।
রাজশাহী তুলা উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোজাদ্দীদ আল শামীম বলেন, উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তুলা চাষ হচ্ছে চারঘাট উপজেলায়। আমের পর অর্থকারী ফসল হিসাবে তুলা চাষ এ অঞ্চলের চাষিদের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।