রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৩৬ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৭ পিএম
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে বৈঠক করেছে পক্ষঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) প্রতিনিধিদল। প্রবা ফটো
নিজ মা ও বাবার নামে নির্মাণাধীন পক্ষঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাজশাহী অঞ্চলের হাজার-হাজার মানুষ এখান থেকে স্বাস্থ্য খাত ছাড়াও শিক্ষা খাতের সেবা পাবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীতে নগর ভবনে মেয়রের দপ্তরকক্ষে আঞ্চলিক পুনর্বাসন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার অগ্রগতি ও প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে এক মতবিনিয়ম সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাসিক মেয়রের সঙ্গে সিআরপি প্রতিনিধিদলের এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠে কাটাখালি পৌরসভার কাপাসিয়ায় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিবারের পক্ষ থেকে দান করা ১৫ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ‘সিআরপি-রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার’। এখান থেকে প্রতিবছর এ অঞ্চলের ১২ হাজার রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পুনর্বাসনসেবা নিতে পারবে। পাশাপাশি চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন অকুপেশনাল থেরাপি, বিএসসি ইন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
সভায় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আর্তমানবতার সেবায় আমার বাবা ও মায়ের নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ার ইচ্ছে ছিল। সে লক্ষ্যে রাজশাহীতে সিআরপির আঞ্চলিক পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এখান থেকে রাজশাহী অঞ্চলের হাজার হাজার অসহায় মানুষ সেবা নিতে পারবে। এই পুনর্বাসন কেন্দ্র শুধু চিকিৎসা নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি গড়তে আমার সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ড. ভেলরি এন টেইলর বলেন, ‘মাননীয় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সিআরপিকে মূল্যবান ৫ একর জমি দান করেন। সেখানে সিআরপি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। আর্তমানবতার সেবায় তার এই মহতি উদ্যোগ সবার কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
সভার শুরুতে সিআরপির প্রতিনিধিদলের সদস্যদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান রাসিক মেয়র। সভায় ‘সিআরপি-রাজশাহী শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার অগ্রগতি ও প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও নায়ারিত আর্কিটেক্ট শায়লা জোয়ার্দার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিআরপির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইদুর রহমান, সদস্য মুশতাক আহমেদ, স্ট্যানফোর্ড স্কুল অব মেডিসিনের প্রফেসর রান্ডাল স্টাফর্ড, গ্লোবাল এইচআর লিডার লরা ফেরাকেন, সিআরপির রাজশাহীর ব্যবস্থাপক সোমা বেগ, রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহের হোসেন সুজা, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সুলতানা আহমেদ সাগরিকা ও কাউন্সিলর ফেরদৌসি, সচিব মোবারক হোসেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন, প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন প্রমুখ।
২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালরি অ্যান টেইলরের সঙ্গে চুক্তি ও জমিদান কার্যক্রম সম্পন্ন করেন রাসিক মেয়র। এই সেন্টারে যেসব চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাবে সেসব হচ্ছে – অপারেশন, প্যাথলজি ও রেডিওলজি সেবা। অভ্যন্তরীণ সেবার মধ্যে থাকবে মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র, অটিজম ও সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষায়িত শিশু বিভাগ, স্ট্রোক রোগীদের জন্য পুনর্বাসন ওয়ার্ড, মেডিকেল কনসালটেন্সি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, শিশু বিভাগ, ক্লাব ফুট বা মুগুর পা চিকিৎসা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় ডে কেয়ার সেন্টার।
পুনর্বাসন সেবাসমূহের মধ্যে থাকবে আর্থসামাজিক সহায়তা, সমাজভিত্তিক পুনর্বাসন, মনোসামাজিক কাউন্সিলিং, ক্রীড়া ও বিনোদন। আর সহায়ক ও পুনর্বাসনসামগ্রীর মধ্যে থাকবে প্রস্থেটিক্স ও অর্থোটিক্স (কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন), অর্থোপেডিক সু টেকনোলজি, সাপোর্টিভ সিটিং বিভাগ, হুইল চেয়ার ও অন্যান্য সহায়ক সামগ্রী।
এ ছাড়াও এখানে গড়ে তোলা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এক বছরের ইন্টার্নশিপসহ চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন অকুপেশনাল থেরাপি, বিএসসি ইন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কোর্স করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
অবকাঠামো সুবিধার মধ্যে থাকবে মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্ত, অটিজম, সেরিব্রাল পালসি ও স্ট্রোক রোগীদের জন্য পুনর্বাসন সেবাদান কেন্দ্র, ভর্তিকৃত রোগীদের আবাসন সুবিধা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিকিৎসকদের জন্য আবাসন সুবিধা ও শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল সুবিধা।