রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:৪৭ পিএম
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:০৪ পিএম
ভূমিদস্যু ও মাফিয়াপুত্র আনভীর বাহিনীর শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নাওড়া গ্রামবাসীর ওপর ভূমিদস্যু মাফিয়াপুত্র আনভীর বাহিনী ফের ‘তাণ্ডব’ চালিয়েছে। এ বাহিনীর হয়ে কাজ করা শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশার নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জন সন্ত্রাসীর দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণে দুজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন গ্রামের নিরীহ লোকজন । ওই নির্বাচনে মোশারফ হোসেন মোশা ও তার বাহিনীর লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভুইয়ার পক্ষে কাজ করেন। ১ লাখ ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কাছে হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকের শাহজাহান ভুইয়া। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজীয় হওয়ার পর থেকেই মোশা বাহিনীর সদস্যরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
এদিন দুপুরে নাওড়া এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ৪৩ মামলার পলাতক আসামি মোশারফ হোসেন ওরফে মোশাসহ মোশা বাহিনীর সদস্য নিরব, স্বাধীন, সাখাওয়াত উল্লাহ, আব্বাস, নাজমুল, রুবেল, আনোয়ার, জয়নাল, তাজেল, রিফাত, রায়হান, আলহাদি, জাগু, বুটটু, চোরা দুলাল, আব্দুল, আরমানসহ প্রায় একশ থেকে দেড়শ সদস্য পিস্তল, টেঁটা, বল্লম, জুইতা, রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, সামুরাইসহ আরও নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নাওরা এলাকার নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় গ্রামের নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিশু ও বৃদ্ধরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে মোশা বাহিনী গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়িভাবে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এতে আলতাব হোসেন নামে এক নিরীহ গ্রামবাসীসহ দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ওই দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া মোশা বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। গ্রামবাসী নিজেদের আত্মরক্ষা করতে মোশা বাহিনীর ওপর পাল্টা হামলা চালায়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ। খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপঙ্কর চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তখন পুলিশকে লক্ষ্য করেও মোশা বাহিনী ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। মোশা বাহিনীর হামলায় রিপন, মাতিন, কামাল, সজিব, হানিফ, শাকিল, আরিফুলসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গ্রামবাসী জানিয়েছেন, একটি মাফিয়া গ্রুপের শেল্টারে হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, মাদক, অস্ত্রসহ ৪৩ মামলার আসামি মোশারফ হোসেন ওরফে মোশাসহ তার বাহিনীর সদস্যরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে নিরীহ গ্রামবাসীর জমি জবরদখল করতে মোশা বাহিনী উঠেপড়ে লেগেছে। মোশার পছন্দের প্রার্থী শাহজান ভুইয়াকে বিজয়ী করতে না পেরে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মোশা বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গ্রামের সাধারণ মানুষ। গ্রামের নিরীহ মানুষের চোখে ঘুম নেই। নির্ঘুম রাত কাটায় তারা। মোশারফ হোসেন মোশাসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান এ গ্রামের সাধারণ মানুষ।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপঙ্কর চন্দ্র সাহা বলেন, সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।