× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মিয়ানমার যুদ্ধের উত্তাপ বাংলাদেশে

পরিস্থিতি নাজুক, কী করবে ঢাকা

প্রবা প্রতিবেদক, ঢাকা, কক্সবাজার ও বান্দরবান

প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩৯ এএম

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৫৮ এএম

সীমান্ত পেরিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে যাচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা। মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তে। প্রবা ফটো

সীমান্ত পেরিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে যাচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা। মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তে। প্রবা ফটো

মিয়ানমারের বাতাসে এখন শুধুই বারুদের গন্ধ। বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধে উত্তাল হয়ে রয়েছে দেশটি। যার আঁচ এসে পড়ছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জনপদে। ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সেখানকার পরিস্থিতি। প্রতিনিয়তই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। গতকাল মঙ্গলবারও (৬ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমার থেকে আসা গুলিতে আহত হয়েছে সীমান্তে বসবাসকারী পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিক। অব্যাহত রয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি, সেনাসদস্য ও বেসামরিক নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনাও। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজিপি, সেনাসদস্য ও নাগরিকসহ মোট ২৬৪ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

গত কয়েকদিনে বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে দেশটির হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণ ও ছুটে আসা মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় গতকাল ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ সময় মিয়ানমারের বিমানবাহিনীর কোনো যুদ্ধবিমান যাতে বাংলাদেশের সীমানায় না ঢোকে, এ ব্যাপারে দেশটিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রচারিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৯টি দেশ।

সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক

এদিকে মিয়ানমার থেকে ছুটে আসা গুলিতে হতাহতের ঘটনায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও কক্সবাজারের উখিয়া এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেখানকার মানুষ ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে সেখানে এখন কান পাতাই দায়। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় বিক্ষিপ্তভাবে ছুটে আসা গুলিতে হতাহতের পাশাপাশি বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গুলির আঘাতে বহু গাছপালা ক্ষতবিক্ষত হতে দেখা গেছে। লোকালয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে একাধিক মর্টার শেল। গত কয়েকদিন থেকেই ওই এলাকায় এমন ভয়াবহ অবস্থা চলছে। লোকালয় থেকে অনেকেই প্রাণভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। যারা রয়ে গেছেন তাদেরকেও সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় জোরালো যুদ্ধ করছে আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। গতকালও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ম্রাউক ইউ ও কিয়াউকতাও শহরে বিদ্রোহীদের কাছে আরও দুটি ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা বাহিনী। এমন এক পরিস্থিতিতে আজ ভারত সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সফরে মিয়ানমারের ইস্যু নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মিয়ানমারে চলমান সংঘাত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যেকোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আমাদের সিদ্ধান্ত আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যদি মিয়ানমারের দ্বন্দ্বের কোনো বিষয় আসে, তাহলে জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’

চীন, ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সংযোগের কারণে ভূরাজনৈতিকভাবেও গুরুত্ব পাচ্ছে মিয়ানমারের এই গৃহযুদ্ধ। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংঘাত বন্ধে দক্ষিণ এশিয়ার বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মিয়ানমারের সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান এই যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। 

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এসব ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মুহাম্মদ মাইনুল কবির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেন। এ সময় গত রবিবার বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশ ও বাংলাদেশ অংশে রাখাইনের সংঘাতের কারণে বাংলাদেশিরা হতাহত হওয়ায় নেপিদোকে প্রতিবাদপত্র দিয়েছে ঢাকা। প্রতিবাদপত্রে কী কারণে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকেছেন, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের সদস্যদের ফেরত নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। চিঠিতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তাদের অভ্যন্তরীণ যে সংঘাত, সেটির কারণে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ, একই সঙ্গে সেখান থেকে গোলাবারুদ এসে আমাদের এখানে পড়া এবং আমাদের মানুষ আহত-নিহত হওয়া, এই পুরো জিনিসটা তাদেরকে জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা যেখানে কাজ করছি, সেই প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত, অগ্রহণযোগ্য। এটা আমরা জানিয়েছি।

ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘ভারতে গিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে সার্বিক বিষয়গুলো তুলে ধরে আলোচনা করা হবে। যেহেতু মিয়ানমার ভারতেরও প্রতিবেশী রাষ্ট্র, আমাদেরও প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমরা ইতঃপূর্বে মিয়ানমার থেকে যাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের সহায়তা বহু আগে থেকেই চেয়েছি। এ বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবেই আলোচিত হবে।

বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে যা বলছেন বিশ্লেষকরা

বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২৮৩ এবং ভারতের সঙ্গে ১ হাজার ৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত বাড়তে থাকলে এই অঞ্চলের ভৌগোলিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সংঘাত বন্ধে দক্ষিণ এশিয়ার বড় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মিয়ানমারের সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান এই যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতাও বৃদ্ধি করতে হবে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, যেসব সামরিক ও বেসামরিক লোক এসেছে, তাদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে হবে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি যুক্ত করা ঠিক হবে না। বরং যদি তাদের ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা ঘটে তবে তা দুই দেশের মধ্যে নতুনভাবে অবিশ্বাস শুরু হবে। এই ঘটনা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট। বাংলাদেশ সব সময় বলে আসছে যে, আমরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করি না। যারা এসেছে মানবিক দিক থেকে তাদের চিকিৎসা ও আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এখন ভারত ও চীন যেভাবে ফেরত পাঠিয়েছিল, সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো ভালো হবে। এটাই আপাতত সমাধান; এর মাধ্যমে বিশ্বাসের জায়গাটি তৈরি হবে আর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও জোরদার করা যাবে। বাংলাদেশি সাধারণ নাগরিক নিহত ও আহত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি এই সংঘাত আরও বাড়তে থাকে- প্রয়োজনে তা আন্তর্জাতিককরণ করার প্রয়োজন হবে। এখানে পশ্চিমা দেশগুলোর মদদ রয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশের ইস্যু না, এখানে ভারত ও চীনসহ আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টিও যুক্ত আছে। এজন্য ভারত, চীনসহ আশিয়ান এবং জাতিসংঘে বিষয়টি তুলে ধরার প্রয়োজন হবে। 

সাবেক কূটনৈতিক এম হুমায়ূন কবির প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রধানত দুভাবে এই সংকটের সমাধানের বিষয়ে কাজ করা হয়। একটি হলো কূটনৈতিক অর্থাৎ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ও দেশটিতে থাকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বাংলাদেশের সীমান্তে না আনা এবং এদেশের মানুষের জান-মালের ক্ষতি না করে তা বলতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সীমান্তকে শক্তিশালী করতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের দিক থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এর মধ্যেও আমাদের কূটনৈতিক উদ্যোগ শক্তিশালী করা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো জোরদার করতে হবে। সমন্বিতভাবে না হলেও আলাদা আলাদাভাবে দেশটিতে যুদ্ধ বিরতির জন্য উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ এ বিষয়টির সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বও যুক্ত। প্রয়োজনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ আঞ্চলিক বড় দেশগুলোর সঙ্গেও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। 

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে আলোচনার বিষয় কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি সামরিক পদক্ষেপ কেন নিচ্ছে না বাংলাদেশ সরকার। এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, যে যুদ্ধটি চলছে সেটি বাংলাদেশের নয়। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ। যারা এই যুদ্ধের সঙ্গে ‍যুক্ত, তাদের সঙ্গে অর্থাৎ দেশটির সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এই সংঘাতের কারণে যে গোলা ও গুলি বাংলাদেশে এসে পড়ছে তার নিয়ন্ত্রণ দেশটির সরকারের হাতে নেই। এখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার মানে, দেশটির যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়া। মিয়ানমারের ফাঁদে পা দেবে কি না- এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ফাঁদে পা দেবে না। এজন্য কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ক্যাম্পগুলো দখলের চেষ্টা করছে বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহীরা যেহেতু সরকারি বাহিনীকে পেছন থেকে গুলি করছে, তাই কিছু গুলিগোলা বাংলাদেশে এসে পড়ছে। এটা বন্ধ করা কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় সম্ভব না। কারণ নিয়্ন্ত্রণহীন এই যুদ্ধে দেশটির সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও বিরোধীপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করা এখনও সম্ভব হয়নি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে একটি ক্রেডিবল ডিফারেন্স তৈরি করতে হবে। এটি করতে হলে যুদ্ধে না জড়িয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে আমাদের নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্ত না করে। 

মিয়ানমারের সামরিক হেলিকপ্টার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এখন তারা যদি মনে করে এমনটা করলে কিছু হবে না। এজন্য আমাদের স্ট্র্যাটেজিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এখন যদি আমাদের আন্তর্জাতিক আকাশসীমা লঙ্ঘন হয় তবে রেসপন্স করতে হবে। আত্মরক্ষার অধিকার বাংলাদেশের অবশ্যই আছে। তারা যুদ্ধ করছে, সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যুদ্ধে না জড়িয়েই তাদের জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যাতে তারা আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন না করে।

গুলিতে আহত আরও ৫, বসতঘরে মর্টার শেল ও গুলির আঘাত

মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে গতকাল বাংলাদেশের ৫ নাগরিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঘুমধুম সীমান্তে একজন, উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সীমান্তবর্তী এলাকার চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। পালংখালীর নলবনিয়া এলাকার আয়ুবুল ইসলাম, রহমতেরবিল এলাকার আনোয়ার হোসেন, পুঁটিবনিয়া এলাকার মোবারক হোসেন ও মো. কাল আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ছাড়াও গতকাল তুমব্রু পশ্চিমকুল পাহাড়পাড়া থেকে আশ্রয়কেন্দ্র উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় গুলিতে আহত হন সৈয়দ আলম নামের একজন। তিনি জানান, বাড়ি থেকে উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি প্রথমে একটি গাছে লেগে তার কপাল ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকালে ঘুমধুম বেতবুনিয়া বাজারসংলগ্ন ছৈয়দ নুরের বসতঘরে একটি মর্টার শেল এসে পড়েছে। এতে ফাটল ধরেছে বাড়ির দেয়ালে। একই সময় ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়িতে এসে পড়ে আরও একটি মর্টার শেল। এ সময় লাগাতার গুলি এসে পড়েছে এপারে। এতে ঘুমধুমের নজরুল ইসলামের বাড়ি, রহমতবিলসংলগ্ন অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নানের বাড়িসহ ৫টি বাড়িতে গুলির আঘাত লেগেছে।

নিরাপদের আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্তের মানুষ

ঘুমধুম ও উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছেড়ে যাওয়ায় সীমান্ত এলাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ও পুলিশ সুপার সৈকত শাহিন। পরিদর্শন শেষে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক বলেন, ঘুমধুম সীমান্তের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সীমান্ত এলাকার ২৪০ পরিবারের মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান নিরাপদে তাদের সরে যেতে সহযোগিতা করছেন। সীমান্তবর্তী ১৫০টি পরিবারের সদস্যরা নিজ উদ্যোগেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। জলপাইতলী এলাকা থেকে ৩০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক গত সোমবার মিয়ানমার থেকে উড়ে আসা মর্টার শেল বিস্ফোরণে নিহত হোসনে আরা বেগমের বাড়িতে যান। শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে তিনি ২০ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।

এদিকে গতকাল দুপুর থেকে মাইকিং করে তুমব্রু, কোনাপাড়া, মাঝেরপাড়া, ভাজাবনিয়াপাড়া, বাজারপাড়া, চাকমা হেডম্যানপাড়া, পশ্চিমকুলপাড়া, ঘুমধুম নয়াপাড়া, পূর্বপাড়া, মাধ্যমপাড়া এলাকার লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আজকে টানা ৫/৬ দিন ধরে সীমান্তে মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছে এলাকাবাসী। 

কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান বলেন, মিয়ানমারে সংঘাত বেড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

মিয়ানমারের আরও ২৬৪ জন বিজিবি হেফাজতে

মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য ছাড়াও পালিয়ে আসছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস কর্মী ও আহত সাধারণ নাগরিকরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পালিয়ে আসা ২৬৪ জনকে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে। 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৬৪ জনের মধ্যে বিজিপি, সেনাসদস্যসহ অন্যরাও রয়েছেন। একটি সূত্র জানায়, বিজিবির হেফাজতে ২৬৪ জনের মধ্যে ২২২ জন বিজিপি সদস্য, সেনাসদস্য দুজন, সিআইডি চারজন, লোকাল পুলিশ ৫ জন, স্পেশাল ব্রাঞ্চের ৯ জন, ইমিগ্রেশন বিভাগের ২০ এবং বেসামরিক নাগরিক দুজন। পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার সকালে রহমতবিল সীমান্ত দিয়ে একে একে ১১৪ জন বিজিপি সদস্য পালিয়ে এসে বিজিবির কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। বিজিবি সদস্যরা তাদের নিরস্ত্র করে ফাঁড়িতে নিয়ে রেখেছেন। আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আহত অবস্থায় রয়েছেন। বিজিবির তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলার দমদমিয়া নাফ নদ জিরো লাইন দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৬৫ জন রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকাকে প্রতিহত করেছেন বিজিবি সদস্যরা। গতকাল দুপুরে উপজেলার হ্নীলার নাফ নদের দমদমিয়াসংলগ্ন জিরো লাইন থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি প্রতিহত করা হয়। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

রাখাইনে মিয়ানমার সেনার আরও দুই ঘাঁটি হাতছাড়া 

রাখাইন রাজ্যের ম্রাউক ইউ ও কিয়াউকতাও শহরে জান্তা বাহিনীর আরও দুটি ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা জানিয়েছে আরাকান আর্মি (এএ)। সশস্ত্র এ বিদ্রোহী গোষ্ঠী জানিয়েছে, রাজ্যের অন্য কয়েকটি এলাকায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের তুমুল লড়াই চলছে। আরাকান আর্মি জানায়, বেশ কয়েক দিন লড়াইয়ের পর গত সোমবার সকালে ম্রাউক ইউ শহরে জান্তার পদাতিক বাহিনীর একটি ব্যাটালিয়নের (লাইট ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়ন-এলআইবি ৩৭৮) সদর দপ্তর দখল করেছে তারা। এর আগে এর কাছের এলআইবি ৫৪০ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর দখল করা হয়। এ ছাড়া শহরের এলআইবি ৩৭৭-এর ঘাঁটিতে হামলা চালানো হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা