৯ কোটির থানা ভবন নির্মাণে অনিয়ম
তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৩৯ এএম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৩ এএম
যশোরের বেনাপোলে নতুন থানা ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ভবনটি হস্তান্তরের আগেই খসে পড়ছে পলেস্তারা। প্রবা ফটো
যশোরের বেনাপোলে নতুন থানা ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ভবন নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে হস্তান্তরের আগেই বিভিন্ন তলার দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল।
যশোর গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে দুই ধাপে বেনাপোল থানা ভবন নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়।
প্রথম ধাপে ভবনের ভিতসহ ৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম দুই তলার কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিটন ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১৯ সালে। দ্বিতীয় ধাপে তৃতীয় তলা ও চতুর্থ তলার কাজ ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় একই মালিক জাহাঙ্গীর আলমের জেএস কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে ২০২১ সালে। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুন মাসে। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ভবনটির বেজমেন্টসহ দেয়ালের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জানালেও তারা এখন পর্যন্ত মেরামত করেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মিন্টু সরদার বলেন, বেনাপোল ছোটআচড়া হাইরোডের পাশে প্রায় তিন বছর ধরে ভবনটি নির্মিত হচ্ছে। তবে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভবনটিতে ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়ায় এলাকায় কানাঘুষা চলছে। অনেকে বলছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নির্ধারিত ব্যয়ের অর্ধেকও খরচ করেনি। দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত পরিমাণ সিমেন্ট ও ভালো মানের বালু। যে কারণে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাটল ও পলেস্তার খসে খসে পড়ছে।
জসিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, চারতলা থানা ভবনটি আমাদের চোখের সামনেই নির্মিত হয়েছে। সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকায় পুলিশ প্রশাসনের আধুনিক স্থাপনা নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই দেয়ালের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। এমনকি বেজমেন্টের বিভিন্ন স্থানে ফাটলও দেখা গেছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
বিষয়টি নিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল পোর্টের জায়গা ব্যবহার করে থানার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। বর্তমান থানা ভবনও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। গত মাসখানেক আগে নতুন থানায় উঠে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। থানায় উঠে দেখি বিভিন্ন দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। এমনকি ভবনের বেশ কয়েক জায়গায় ফাটলও ধরেছে। এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক জাহাঙ্গীরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো কথারই গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিটন ট্রেডার্সের মালিক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে কয়েক দফায় যোগাযোগের পর কথা হয়। থানা ভবন নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা কাজ ঠিকঠাক করেছি। এখন যদি নষ্ট হয়, তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই। এ বিষয়ে আর কিছু বলারও নেই। আপনার কিছু বলার থাকলে অথবা নষ্টের কারণ জানতে হলে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তিনিই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।
বিষয়টি নিয়ে যশোর গণপূর্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী তরিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবনটি হস্তান্তরের বাকি প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস। এখনও এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। এমনকি ভবনটির দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়া ও ফাটলের বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। এ বিষয়ে যথাযথ খোঁজখবর নেওয়া হবে। এ ধরনের সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।