× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হারিয়ে গেছে ‘বানাই’ ভাষা

নাঈম ইসলাম, শেরপুর

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:২৯ পিএম

শেরপুরের ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের বানাই জাতিগোষ্ঠীর শিশুরা পড়ালেখা করছে বাংলা ভাষায়। দৈনন্দিন কথাবার্তাও চলে বাংলায়। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

শেরপুরের ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের বানাই জাতিগোষ্ঠীর শিশুরা পড়ালেখা করছে বাংলা ভাষায়। দৈনন্দিন কথাবার্তাও চলে বাংলায়। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

ভারতের সীমান্তঘেঁষা নিভৃত এক পল্লী বানাইপাড়া। শেরপুরের ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের এ পল্লীতে বাস করে পাহাড়িয়া বানাই সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক মানুষ। বাঙালিদের সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বললেও তাদের ছিল নিজস্ব ‘বানাই’ ভাষা ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। ছিল দেড় হাজার মানুষের বাস। এ সম্প্রদায়ের সবাই একসময় নিজস্ব ভাষাতেই কথা বলত। ঘরে-বাইরে সবখানেই চলত এ ভাষা। কিন্তু সময় পরিক্রমায় ধীরে ধীরে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। অনেকেই পল্লী ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। চর্চার অভাবে নতুন প্রজন্ম এ ভাষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারা ভুলে গেছে নিজেদের ভাষা ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। তাই এ ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা চান নৃ-গোষ্ঠীর নেতা ও ভাষা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা।

বানাইপাড়ার বাসিন্দা নসেন্দ্র দেব বলেন, ‘বানাই ভাষা দিন দিন হারাই গেছে গা। এখন পুলাপাইন (ছেলেমেয়ে) শুধু বাংলায় বলে আর বাংলায় বলে। বানাই ভাষা কেউ কইতে (বলতে) পারে না। আগে সবাই এ ভাষাতে কথা কইত। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো জানতেই পারবে না বানাই সম্প্রদায়ের নিজস্ব কোনো ভাষা ছিল। একটি ভাষা এভাবে হারাতে পারে না। তাই ভাষাটা ধরে রাখা জরুরি।’

স্কুলছাত্র সায়ান্ত কুমার বলে, ‘আমরা শুনেছি আমাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি ছিল। কিন্তু আমরা সে ভাষা শিখতে পারিনি। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় বাংলা ব্যবহার করি। এ ছাড়াও পড়াশোনা বাংলা ভাষায় করতে হয়। ফলে বানাই ভাষা শেখার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ ছিল না। আমাদের নিজস্ব ভাষা রক্ষা করা দরকার।’ 

স্কুলছাত্রী দিপালী পাল বলে, ‘আমাদের নিজস্ব এ ভাষায় পড়া বা লেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ভাষাটির প্রতি আগ্রহ কমতে কমতে এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পল্লীর কেউ বানাই ভাষাতে কথা বলতে পারে না। আমরা বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে স্কুলে পড়াশোনা ও খেলাধুলা করায় ছোটবেলা থেকেই বাংলা ভাষা আয়ত্ত করে ফেলেছি। নতুন প্রজন্মের জন্য আমাদের নিজস্ব ভাষা বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানাচ্ছি।’

স্থানীয় শিক্ষক নেতা প্রদীপ মারাক বলেন, ‘বানাই ভাষা সংরক্ষিত না থাকায় ভাষাটি হারিয়ে গেছে। বানাই ভাষার বর্ণমালা না থাকায় তরুণ প্রজন্মও নিজস্ব ভাষার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। তাই চর্চা না থাকায় তারাও বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করে, সব জায়গায় বাংলা ব্যবহার করে। কেবল চর্চার অভাবে বানাই ভাষা হারিয়ে গেছে। এখন ভাষাটি খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করার দাবি জানাচ্ছি।’

গারো পাহাড়ে ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করেন শেরপুর জেলা বর্মণ পরিষদের সভাপতি পবিত্র চন্দ্র বর্মণ। তিনি বলেন, ‘গারো পাহাড়ি বানাই সম্প্রদায়ের একসময় নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু নিজস্ব ভাষার সব জায়গায় ব্যবহার না থাকায় এ সম্প্রদায়ের মানুষজন দিন দিন ভাষা ভুলতে থাকে। একপর্যায়ে বানাইপাড়ার সবাই এ ভাষা ভুলে গেছে। হারিয়ে ফেলেছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও আচার অনুষ্ঠান। তারা এখন কোচ সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও আচার অনুষ্ঠান চর্চা করে। নিজের ভাষা ভুলে প্রচলিত বাংলা ভাষাতেই কথাবার্তা বলে। এ ছাড়া এ অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গারো ভাষার বই প্রণয়ন করা হলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। অন্য ধর্মের শিক্ষকরা গারো ভাষা বুঝতে না পারায় বইগুলো পড়ে রয়েছে। তাই নিজস্ব ভাষার শিক্ষক নিয়োগের দাবিও জানাচ্ছি।’

বেসরকারি সংস্থা আইইডির আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের তথ‌্যম‌তে, জেলায় গারো ২৬ হাজার ৫০০, বর্মণ ২২ হাজার, হাজং ৩ হাজার ৭০০, হদি ৩ হাজার ৫০০, কোচ ৪ হাজার, ডালু ১ হাজার ৫০০, বানাই ১৫০ জন র‌য়ে‌ছে।

শেরপুরের আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের (আইইডি) ফেলো সুমন্ত বর্মণ বলেন, ‘শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় সাতটি নৃগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষের বাস। এর মধ্যে গারো, কোচ, বর্মণ, হাজং, হদি, বানাই, ডালুসহ সাতটি সম্প্রদায় রয়েছে। তবে এদের মধ্যে বানাই ভাষা একেবারে ভুলে গেছে তারা। একদিকে ঘরে-বাইরে সব জায়গায় বাংলা ভাষার আধিক্য ও অন্যদিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আদিবাসী শিশুরা তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। সরকারি সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নিজস্ব ভাষা ধরে রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করতে উৎসাহ বোধ করে না কেউ। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হারানো ভাষা উদ্ধার করার দাবি জানাচ্ছি।’

শিক্ষক সংকটের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আশা করছি দ্রুত কর্তৃপক্ষের সহায়তায় নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষার বই পাব এবং এ বছর কিছু দেওয়াও হয়েছে। আর পর্যাপ্ত শিক্ষক পেলে আমরা ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখতে পারব।’

জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা নৃগোষ্ঠীদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দিয়ে বিভিন্নভাবে তাদের সংযুক্ত করছি। এরই মধ্যে একটি ছোট পরিসরে সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আমরা তাদের সংস্কৃতি রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়াও বড় পরিসরে আরেকটি সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আর ভাষা রক্ষার জন্য জাতীয় গণ গ্রন্থাগারের মাধ্যমে উদ্যোগ নিচ্ছি, যেন নৃগোষ্ঠীদের ভাষা চর্চা ও রক্ষা করা যায়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা