ময়মনসিংহ অফিস
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩৩ পিএম
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩৭ পিএম
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরের সামনে মাটিতে বসে আহাজারি করছিলেন আল আমিনের মা আনিসা খাতুন। প্রবা ফটো
ময়মনসিংহে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন অটোচালক আল আমিন। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তাকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পরিবার।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরের সামনে মাটিতে বসে আহাজারি করছিলেন আল আমিনের মা আনিসা খাতুন।
সন্তানের শোকে কাতর মা বার বার বলছিলেন, ছেলে সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বলে গেল মা বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরে সবার সঙ্গে দুপুরে ভাত খাবে। আর ফিরল না আমার বাবা। সন্তানের বলা শেষ কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন তিনি।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার আলালপুর এলাকায় ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় সাতজন।
আল আমিনের স্বজনরা জানায়, ছয় ভাই-বোনের মধ্যে আল আমিন পঞ্চম। বিয়ের পর সবাই আলাদা থাকলেও মা-বাবা, স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে ফুলপুর বালিয়া মোড়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। ভাড়ায় চালিত অটোরিকশার আয় দিয়েই সংসার চলতো তার। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকালে ৮টায় সিএনজি নিয়ে বের হন আল-আমিন। বেরিয়ে যাওয়ার সময় মা কে বলে যায়, বাজার-সদাই নিয়ে এসে পরিবারের সঙ্গে দুপুরে খাবার খাবেন। আল আমিনের পথ চেয়ে তাই বসে ছিলেন পরিবারে সবাই। ১২টার দিকে খবর পান আল-আমিনের সিএনজি সদর উপজেলার ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের আলালপুরে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে, মারা গেছে সাত জন। ঘটনাস্থলে ছুটে এসে ছেলের রক্তাক্ত নিথর দেহ দেখে জ্ঞান হারান আনিসা খাতুন। বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেন বাবা সাহের উদ্দিনও। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে স্তব্ধ পরিবার।
আল আমিনের বড় বোন তাসলিমা জানান, তার বাবা বয়স্ক এবং অসুস্থ বলে কাজ করতে পারেন না। অন্য ভাইয়েরা আলাদা হয়ে গেলেও আল আমিন বাবা-মাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করত। স্ত্রী হালিমা ছেলে-মেয়ে নিয়ে টানাপোড়েনের সংসার তার। এখন তার মারা যাওয়ায় অসহায় পুরো পরিবারটি। এখন বাবা-মাকেকে দেখবে বা ছেট ছোট সন্তান দুটিকেই কে দেখবে।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে শেরপুরগামী আদিল পরিবহনের একটি দ্রুতগামী বাস আলালপুর আসতেই বিপরীত দিক থেকে আসা অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার চালক আল আমিনসহ সাতজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন, ফুলপুর উপজেলার রামভদ্রপুরের আশাবট গ্রামের বাবলু আহমেদ ও তার স্ত্রী শিলা আক্তার, তাদের ছেলে মো. সাদমান এবং দিও গ্রামের বাসিন্দা অটোচালক আল-আমিন হোসেন, ধোবাউড়া ডুমঘাটা এলাকার গোলাম মোস্তফা। অন্য দুইজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘাতক বাসটি আটক করা গেলেও চালক পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।