এহসানুল হক সুমন, রংপুর
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৪ পিএম
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:২৫ পিএম
রংপুরে বারি’র সরেজমিন গবেষণা বিভাগের চাষ করা লিলিয়াম ফুল। প্রবা ফটো
শীতপ্রধান দেশের ফুল লিলিয়াম। সাদা, হলুদ আর লাল রঙ। তিন রঙের ফুল ফাল্গুনের আগমনী বাতাসে দোল খাচ্ছে। শিমুল আকৃতির এ ফুল গবেষণামূলকভাবে চাষ করেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট রংপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ। প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে বিদেশি ফুল দেখতে আসছেন ফুলপ্রেমীরা।সৌন্দর্যের কারণে পৃথিবীতে চাহিদার শীর্ষে থাকা এ ফুল ৩ বছর ধরে চাষ করে গবেষণার মাঠে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চাহিদা বেশি ও উচ্চমূল্য হওয়ায় এ ফুল কৃষকের ভাগ্য বদলের হাতছানি দিচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা শেষে আগ্রহী কয়েকজন চাষির মধ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তর করেছেন। ইতোমধ্যে জেলার ৫ কৃষক লিলিয়াম চাষে সফলতার মুখ দেখেছেন। রংপুরে চাষ হওয়া লিলিয়াম ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে স্থানীয় বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন ফুল বাজারে শোভা পাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাপক পরিসরে লিলিয়াম ফুল চাষ সম্প্রসারণে কাজ শুরু করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট রংপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শীতপ্রধান দেশে লিলিয়াম ফুলের আবাদ হয়। বিশ্বে এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভজনক ফসল হিসেবে দেশে লিলিয়াম আবাদের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা। দু ধরনের লিলিয়াম ফুলের মধ্যে রয়েছে এশিয়াটিক ও অরিয়েন্টাল লিলিয়াম। ২০১৫ সালে বারীর উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফুল বিভাগের বিজ্ঞানীরা এশিয়াটিক লিলিয়ামের ওপর সীমিত আকারে গবেষণা শুরু করেন। বর্তমানে এশিয়াটিক ও অরিয়েন্টাল লিলিয়ামের বিভিন্ন জাত সংগ্রহ, মূল্যায়ন, বৈশিষ্ট্যকরণ, ফুল উৎপাদন কলাকৌশল, জাত উন্নয়ন, দ্রুততম সময়ে বংশবৃদ্ধি, কন্দ সংরক্ষণ নিয়ে গবেষণা করছে। বর্তমানে বারি লিলিয়াম-১, বারি লিলিয়াম-২ ও বারি লিলিয়াম-৩ জাত চাষ হচ্ছে।
স্বল্প খরচ হওয়ায় এ ফুল চাষের মাধ্যমে ৬০ শতাংশ আয় করা সম্ভব। নভেম্বর মাসের ২০ তারিখে এ ফুলের কন্দ রোপণ করলে পহেলা ফাল্গুনের প্রথম ভাগে বাজারজাত করা যায়। প্রতি বর্গমিটারে লিলিয়াম ফুলের ৩০ থেকে ৪০টি গাছ থাকে। প্রতিটি গাছে ১৫ থেকে ২৫টি ফুল ফোটে। সঠিক সময়ে সংগ্রহ করা গেলে এ ফুল ১৫ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে এ ফুল প্রতি স্টিক ২০০ টাকা এবং রাজধানীর বাজারে আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ফুলের চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
রংপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আল আমিন তালুকদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গবেষণা মাঠে শীতপ্রধান দেশের ফুল লিলিয়াম চাষ করে সফল হয়েছি। বর্তমানে সাদা রঙের বারি লিলিয়াম-১, হলুদ রঙের বারি লিলিয়াম-২ ও কমলা রঙের বারি লিলিয়াম-৩ চাষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে রংপুরের ৫ জন কৃষক প্রায় ২৫ শতক জমিতে চাষ করেছেন। তারা আড়াইশ থেকে ৩০০ টাকা করে প্রতি স্টিক বিক্রি করেছেন। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা এ ফুল চাষে ঝুঁকছেন।
তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুনের মতো উৎসবকে ঘিরে লিলিয়ামের কন্দ রোপণের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ ছাড়া চাষ পদ্ধতি, সার ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনাসহ নানা কারিগরি বিষয় হাতেকলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। এ ছাড়াও তাদের ফুল ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে দিচ্ছি। আগামীতে ব্যাপকভাবে এ ফুলের চাষ ছড়িয়ে যাবে মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, লিলিয়াম ফুল কন্দ দ্বারা হয়। আমরা ফুল কাটার পর গাছের ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার অংশ ৪০ দিনের মতো মাটিতেই রেখে দেই। এ সময় কন্দটি পূর্ণবয়স্ক হলে তা কোকোডাস্টের মাঝে ক্যারেটে করে হিমাগারে রাখা হয়। প্রতিটি গাছ থেকে পরবর্তীতে রোপণের জন্য ৩ থেকে ৪টি কন্দ পাওয়া যায়।