শরীফ স্বাধীন, মাগুরা
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৫১ পিএম
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:২০ পিএম
মাগুরা সদর উপজেলার কাশীনাথপুর গ্রামের মাঠে মাড়াই যন্ত্রে সরিষা থেকে দানা বের করা হচ্ছে। প্রবা ফটো
কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। যান্ত্রিকীকরণের ফলে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন বাড়ছে, তেমনি কমেছে অপচয় আর উৎপাদন ব্যয়ও। কমেছে দিনমজুরের ওপর নির্ভরতা। বর্তমানে দেশে তৈরি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে কৃষকরা সুফল পেতেও শুরু করেছে। সময়মতো চারা রোপণ থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত দেশে আমদানি করা কৃষি যন্ত্রপাতির পাশাপাশি দেশে তৈরি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে। মাগুরা জেলায় কৃষকরাও ব্যবহার করছে দেশে তৈরি আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। বর্তমানে চারা রোপণে ট্রন্সপ্লান্টার, বীজ বপনে ইনক্লাইন্ড প্লেট সিডার, খেতের বেড-নালা তৈরিতে বেড প্লান্টার, ফসল কাটায় রিপার ও হারভেস্টারসহ মাড়াইয়ে ট্রেসিং যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। তবে এসবের মাঝে কৃষকের নজর কেড়েছে মাড়াই (ট্রেসিং) যন্ত্রটি। কৃষকদের দাবি, এই যন্ত্র না থাকলে বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩৫ কেজি ফলন নষ্ট বা অপচয় হতো।
সরেজমিন দেখা যায়, শহরের কাশীনাথপুর গ্রামের মাঠে এক জায়গায় কৃষক সরিষাগাছ তুলে স্তূপ করে রাখছেন। জমিতেই থাকা মাড়াই (ট্রেসিং) যন্ত্রের এক দিকে সরিষাগাছ দিচ্ছেন অন্যদিকে ভুসি আর নিচ দিয়ে সরিষা দানা বের হচ্ছে। কৃষক সঙ্গে সঙ্গে আঁশ ছাড়ানো ফল হাত জালির চালুনি দিয়ে সরিষা দানা আলাদা করছেন। এরপর বস্তায় ভরা হচ্ছে। প্রযুক্তির কল্যাণে ফসল উৎপাদনে কৃষকের অর্থ যেমন সাশ্রয় হচ্ছে, সময় কম লাগছে তেমনি ফসল অপচয় হচ্ছে না। আবার অতিরিক্ত হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে ভুসি। যা ব্যবহার হচ্ছে গো-খাদ্য হিসেবে।
স্থানীয় কৃষক তারেক মোল্যা বলেন, এক একর জমিতে সরিষার চাষ করেছি। জমি প্রস্তুত থেকে বীজ ক্রয়-বপন, সার ও কীটনাশক দেওয়া পর্যন্ত ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফসল কাটা, মাড়াইসহ বস্তায় ভরা পর্যন্ত খরচ হবে ৬ হাজার টাকা। এভাবে এক একর জমিতে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। আশা করছি ১৭-১৮ মণ সরিষা পাব, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তবে মাড়াই মেশিন না থাকলে আরও ৫-৬ হাজার টাকা বেশি খরচ হতো।
নতুন বাজার হাটে সরিষা বিক্রি করতে আসা কৃষক দুলাল বিশ্বাস বলেন, আগে সরিষা গাছ তুলে শুকানো এবং দানা ফাটানোর জন্য রাস্তায় বিছিয়ে রাখতাম। এরপর বাড়ির উঠানে এনে ড্রামে বাড়ি দিয়ে সরিষার দানা বের করতে হতো। এতে রাস্তায় এবং আশপাশে সরিষার দানা পড়ে অপচয় হতো। বর্তমানে মাড়াই মেশিন আসায় ফসল অপচয় না হওয়ায় বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩৫ মণ সরিষা বেশি পাওয়া যায়।
বিভিন্ন মাঠে ভাড়ায় দেওয়া মাড়াই (ট্রেসিং) যন্ত্র ব্যবসায়ী মো. মধু ইসলাম বলেন, মাড়াই কলে আট ধরনের ফসল মাড়াই করা যায়। সরিষা মাড়াইয়ে বিঘাপ্রতি ১ হাজার ৩০০ টাকা নিয়ে থাকি। ফসলের মাঠে নিয়ে গিয়ে এক বিঘা জমির সরিষাগাছ তোলা এবং দানা বস্তায় ভরা পর্যন্ত সময় লাগে চার ঘণ্টা। আগে যেখানে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগত। দেশে তৈরি এই মাড়াই মেশিনটি ডিজেলে চলে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২২ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৬ হাজার ৫১ হেক্টর জমি বেশি। প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৩৫ টন হিসেবে জেলায় মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭৬৭ টন।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, এ বছর জেলায় সরিষা উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে আশা করছি তা অর্জন হবে। কারণ আবহাওয়া অথবা রোগবালাইজনিত কারণে ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি এবং মাড়াই (ট্রেসিং) যন্ত্রের বহুল ব্যবহারে উৎপাদিত ফসলের অপচয়ও হয়নি।