নড়াইল সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৩৬ পিএম
চারণকবি বিজয় সরকার। ফাইল ফটো
চারণকবি বিজয় সরকারের ১২২তম জন্মবার্ষিকী মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি)। দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে কবির জন্মভূমি নড়াইল সদর উপজেলার ডুমদী গ্রামের নিজ বাসভবনে দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে বিজয় সরকার জন্মজয়ন্তী উৎসব উদযাপন কমিটি।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কর্মসূচির প্রথম দিনে ছিল কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আলোচনা সভা, বিজয় গীতি পরিবেশনা ও ভাবগানের আসর। মঙ্গলবার দিনব্যাপী উন্মুক্ত বিজয় গীতি পরিবেশনা, আলোচনা সভা ও কবিগানের আসর হবে।
চারণকবি বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের ডুমদী গ্রামে পিতা নবকৃষ্ণ অধিকারী ও মাতা হিমালয় অধিকারীর সংসারে জন্মগ্রহণ করেন। দশ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ১৯২৬ সালে স্থানীয় বাশগ্রাম হাইস্কুল থেকে তৎকালীন মেট্রিকুলেশন পাস করে স্থানীয় ডুমদী প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি কবি ভুবন ঘোষের সান্নিধ্য লাভ করেন। এরপর অভিনেতা নেপালচন্দ্র বিশ্বাসের উৎসাহে নড়াইলের জমিদার মনীন্দ্র রায়ের যাত্রা দলে যোগ দেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি অরুনেশ্বর রায়ের কাছে রবীন্দ্রসংগীতে তালিম নেন। এ ছাড়াও লোককবি মনোহর সরকারের কাছে কবিগানের দীক্ষা নেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে কবিগানের দল তৈরি করেন। ফরিদপুর জেলার বেন্নবাড়ী গ্রামে তার প্রথম কবিগানের আসর অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদপুর, বরিশাল, ঢাকাসহ ভারতের দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, আন্দামান, ত্রিপুরা ও আসামের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় কবিগান পরিবেশন করেন। তিনি ছিলেন একাধারে গানের রচয়িতা ও সুরকার।
পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী, একদিন ভাবি নাই মনে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে, তুমি জানো নারে প্রিয়- এ ধরনের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা ছিলেন তিনি। দীর্ঘ সংগীতজীবনে বিচ্ছেদ গান, শোক গান, ইসলামি গান, আধ্যাত্মিক গান, দেশের গান, কীর্তন, ধর্মভক্তি, মরমি গান, বাউল, কৃষ্ণপ্রেম নিয়ে তিনি প্রায় দুই হাজার গান রচনা করেছেন। গ্রামবাংলার মানুষের হৃদয়ের আকুতিকে তিনি চমৎকার সুর ব্যঞ্জনায় তুলে ধরে সাধারণ মানুষের অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছেন।
দুই বাংলায় সমানভাবে জনপ্রিয় এই কবি শেষ জীবনে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কেউটিয়ায় বসবাস করতেন। ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেলুড়িয়া নামক স্থানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই চারণকবি।