× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিলুপ্তির পথে হাজং ভাষা

আনিসুর রহমান, ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ)

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:১৪ এএম

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫৬ পিএম

হাজং ভাষা শেখাচ্ছেন অন্তর হাজং। প্রবা ফটো

হাজং ভাষা শেখাচ্ছেন অন্তর হাজং। প্রবা ফটো

বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী হাজং। ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও শেরপুর এলাকার পাহাড়ি এলাকায় অধিকাংশের বসবাস, তবে সমভূমিতেও থাকেন অনেকে। এ ছাড়াও সিলেট ও সুনামগঞ্জেও বাস করেন অল্পসংখ্যক হাজং। এই নৃগোষ্ঠীর আছে নিজস্ব ভাষা, তবে নেই নিজস্ব বর্ণমালা। মৌখিক ভাষা, যা আছে সেটিও প্রায় বিলুপ্তির পথে। 

এ জনগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৪৬ সালের আগে এদেশে লক্ষাধিক হাজং সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর বাস ছিল। তারা লড়াই করেছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। হাতিখেদা বিদ্রোহ ও টঙ্ক প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে গিয়ে শাসকদের রোষানলের শিকার হন। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হন ভিটেমাটি তথা দেশ ছাড়তে। 

হাজং সম্প্রদায়ের তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলাদেশের শতাধিক গ্রামে হাজংদের বাস। মোট জনসংখ্যা ২০ হাজারের সামান্য কিছু বেশি। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও নেত্রকোণার দুর্গাপুরে প্রায় ৮ হাজারের অধিক হাজং লোকজনের বসবাস রয়েছে। দেশভাগের আগে ময়মনসিংহ জেলায় হাজংরা চাষাবাদের মাধ্যমে ছিল স্বনির্ভর। বর্তমানে অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর চেয়ে হাজংরা শিক্ষাদীক্ষা, চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে রয়েছে পিছিয়ে। 

জন্মের পর হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন নিজস্ব ভাষায় সুখ-দুঃখে ভাব বিনিময় করলেও তাদের হাঁটতে হয় বাংলার হাত ধরেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ভাষা চর্চার সুযোগ না থাকায় হাজংদের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মও ভুলতে বসেছে হাজং ভাষা। ভাষা রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের দাবি প্রাথমিকে পাঠ্যবইয়ে হাজং ভাষা অন্তর্ভুক্তের। 

বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশিষ হাজং বলেন, পারিবারিকভাবে আমাদের শিশুরা হাজং ভাষা ছাড়া আর কিছুর সঙ্গে পরিচিত হতে পারে না। তাই স্কুলের পাঠ্যবইয়ে নিজেদের ভাষা না থাকায় একসময় তারা তাল হারিয়ে ফেলে। এজন্য প্রাক প্রাথমিকে বাংলা হরফে হাজং ভাষা অন্তর্ভুক্ত ও পাঠদানের দাবি জানাই।

হাজং ভাষা চর্চায় কাজ করা হাজং ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর হাজং প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রতি শুক্রবার এবং শনিবার দেশের বিভিন্ন গ্রামে নিজ উদ্যোগে হাজং শিশুদের ভাষা চর্চার চেষ্টা চালাচ্ছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ১২টি ভাষা সাহিত্য চর্চা কেন্দ্র গড়ে তুলেছি, এটা যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে। সরকারি উদ্যোগে হাজং ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।

ধোবাউড়া উপজেলার চারুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানসী হাজং প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমি অনেক দিন ধরে শুনছি প্রাথমিকে হাজং ভাষা অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু হচ্ছে, হবে করেও সেটা হয় না। আমাদের হাজং ভাষা চর্চার অভাবে বিলুপ্তির পথে। গ্রামের শিশুরা বাড়িতে কিছুটা চর্চা করলেও যারা শহরে থাকে তারা হাজং ভাষা চর্চা করতে পারে না। আমার স্কুলে ২১ জন হাজং শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা স্কুলে তাদের ভাষা শিখতে পারে না। আমাদের এই ভাষা রক্ষার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হাজং ভাষা চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং পাঠ্যপুস্তকে হাজং ভাষা অন্তর্ভুক্তের জোর দাবি জানাই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা