গাইবান্ধা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩২ পিএম
মোতাহার হোসেন মুন্সির জানাজায় স্বজন ও প্রতিবেশীরা। বৃহস্পতিবার রাতে পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামে। প্রবা ফটো
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় জমি বিক্রির টাকার ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে মোতাহার হোসেন মুন্সি নামের এক বৃদ্ধের মরদেহ প্রায় ৭২ ঘণ্টা উঠানে পড়েছিল। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামে পুলিশের হস্তক্ষেপে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
মৃত মোতাহার হোসেন একই গ্রামের নজরুল ইসলামের বড় ভাই। মোতাহার ঢাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের অফিস সহকারী ছিলেন। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পলাশবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো: সাজ্জাদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তিন দিনেও লাশ দাফন হয়নি এমন খবরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে পারিবারিকভাবে অর্থ সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের বিষয়ে সমঝোতা হওয়ায় দুই পক্ষকে বুঝিয়ে রাতে লাশ দাফন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীদের সূত্র জানা যায়, ৭৫ বছর বয়সী মোতাহার হোসেন মুন্সী ঢাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান। তার স্ত্রী মাসুমা বেগমকে নিয়ে তিনি ধানমন্ডির কলাবাগান এলাকায় থাকতেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি নিঃসন্তান ছিলেন।
কিছুদিন আগে মোতাহার হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন পড়ে। তাই তার ঢাকায় থাকা এক খন্ড জমি তিনি দুই কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এরপর গত এক সপ্তাহ আগে অসুস্থতা বেশি হওয়ায় তাকে ঢাকার আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
পরদিন মোতাহার হোসেনের মরদেহ দাফনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে পলাশবাড়ী উপজেলার শাকোয়া মাঝিপাড়া গ্রামে আনেন তার স্ত্রী। পরে ওই মরদেহ দাফনে বাধা দেয় মোতাহার হোসেনের ছোট ভাই নজরুল ইসলাম মুন্সী ও তার ভাতিজা হাবিবসহ পারিবারের কয়েকজন। এ সময় তারা মাসুমা বেগমের কাছে মোতাহার আলীর কাছে থাকা জমি বিক্রির ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা কোথায় কোন ব্যাংকে আছে তা জানতে চান। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে লাশ নিজ বাড়ির উঠানে পড়ে থাকে।
স্থানীয়রা চেষ্টা করেও দ্বন্দ্বের নিরসন করতে পারেননি। অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে লাশ দাফন না হওয়ার ঘটনা জানতে পারেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পলাশবাড়ী থানা পুলিশ। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বৈঠক করে উভয়কে নিয়ে একটি সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তাদের উপস্থিতিতে নিজ বাড়ির উঠানে জানাজা নামাজ শেষে মোতাহার আলীর লাশ দাফন করা হয়।
ভাই-ভাতিজাদের অভিযোগ, কিছু দিন আগে মোতাহার আলী তার নিজ নামের জমি দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা বিক্রি করেন। সেই টাকা স্ত্রীর নামে ব্যাংকে রাখেন। পরে মাসুমা বেগম গোপনে ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা উত্তোলন করেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বেতকাপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, নিঃসন্তান মোতাহার আলীর ভাই-ভাতিজারা লাশ দাফনে আপত্তি জানানোর কারণে লাশ বাড়ির উঠানে ছিল। দেনাপাওনা এবং সম্পদ বিক্রির প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা নিয়ে তার স্ত্রী মাসুমা বেগমের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান তার পরিবারের লোকজন। অবশেষে উভয়কে নিয়ে পারিবারিকভাবে অর্থ সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। মোতাহার আলীর স্ত্রী মাসুমা বেগম তার ভাই-ভাতিজাদের ৬০ লাখ টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়েছেন। এরপরই নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে।