রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৩ পিএম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:১৪ পিএম
রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির প্রধান জেলা কালচারাল অফিসার মো. আসাদুজ্জামান সরকার। প্রবা ফটো
মুরাদ হোসেন সরকারের পর এবার রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির প্রধান জেলা কালচারাল অফিসার মো. আসাদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এক ছাত্রী ২২ ফেব্রুয়ারি রাজপাড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাও করেছেন। এর আগে এই অফিসারের বিরুদ্ধে সংস্কৃতিচর্চার জন্য বরাদ্দের ২ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। পছন্দের প্রতিযোগীকে প্রথম স্থান পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে একজন অভিভাবক জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। তারপরও বহাল রয়েছেন মো. আসাদুজ্জামান সরকার।
২২ ফেব্রুয়ারি রাজপাড়া থানায় ভুক্তভোগী এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, চার বছর ধরে মো. আসাদুজ্জামান সরকার তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। সম্প্রতি তিনি বিয়ের কথা বললে আসাদুজ্জামান তাকে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করেন। আসাদুজ্জামানের অফিসে সম্প্রতি আরও কয়েকজন নারী একই অভিযোগ নিয়ে হাজির হন। এরপর ওই ছাত্রী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে তিনি হুমকি-ধমকির অডিও সংযুক্ত করেন।
মো. আসাদুজ্জামান সরকারের স্ত্রী গাইবান্ধা জেলার একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। তাদের একটি সন্তান রয়েছে। ছাত্রী বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমাকে আসাদুজ্জামান সরকার বলে আসছেন স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক ভালো নেই। তারা তালাক নেবেন। আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন তিনি। এর মাঝে শিল্পকলার সকল আয়োজনে তিনি আমাকে আটকে রাখতেন। তার রুমে বসিয়ে রাখতেন। সম্প্রতি আমি তাকে বিয়ের জন্য বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এর মাঝে আরও কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর খবর পাই যারা একইভাবে তার লালসার শিকার হয়েছেন। তাদের বিষয়টি জানার পর আমি তাদের নিয়ে অভিযোগ করার চেষ্ট করি। তবে তারা লজ্জায় কাউকে কিছু বলতে চাচ্ছে না। এমন পাঁচজন নারীকে আমি চিনি যারা এই মানুষটা থেকে প্রতারিত হয়েছে। আসাদুজ্জামান সরকার যাতে আর কারও জীবন নষ্ট করতে না পারে, তাই আমি এই মামলা করেছি তথ্য-প্রমাণসহ।’
ছাত্রী বলেন, ‘আমি কয়েকবার আত্মহত্যা করতে চেষ্টা করি। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে আসাদুজ্জামান সরকার উদ্ধার করেন। এসবের প্রমাণও আমার কাছে আছে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা কালচারাল অফিসার মো. আসাদুজ্জামান সরকারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার দপ্তরে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। রাজশাহী শহরের ভদ্রায় তার ভাড়াবাসায় গিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে তিনি বাসায় ফেরেননি।
রাজশাহী সিটি পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. জামিরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে আইনগত কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে তিনি পালিয়ে রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।‘
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এ বিষয়ে অবগত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের ঘটনা। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ আজিমপুর শাখার গণিত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে অনেক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে সম্প্রতি। স্কুল কর্তৃপক্ষ তদন্তে সে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পায়। সেই থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করছে সেখানকার শিক্ষার্থীরা।