স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে অনশন
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৩৯ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১২ এএম
স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে অনশনে তরুণী। চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ হাউজিং এলাকা। মঙ্গলবার বিকালে তোলা। ছবি : নিপুল কুমার দে
‘আমি তার (স্বামীর) সঙ্গে থাকতে চাই, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। আমি ডিভোর্স চাই না, আলাদা হতে চাই না। আমি শুধু তার সঙ্গে থাকতে চাই।’
কথাগুলো বলছিলেন স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে শনিবার থেকে অনশনে থাকা এক তরুণী। তার সঙ্গে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কথা হয় চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং এলাকায়। এই হাউজিং সোসাইটির ৫ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছেন তিনি।
সেখানে দেখা যায়– বাড়িটির প্রধান ফটকের সামনে একটি চেয়ারে বসে আছেন তরুণী। তার হাতে একটি প্ল্যাকার্ড; যেখানে লেখা রয়েছে ‘স্ত্রীর মর্যদার দাবিতে অনশন’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৫ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়িতে থাকেন মারসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরীর পরিবার। তার ছেলে আব্দুল আহাদ মর্তুজাকে স্বামী দাবি করছেন ওই তরুণী। স্ত্রীর মর্যাদা চেয়ে তরুণী শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন, মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরী, তার স্ত্রী রহিমা বেগম ও তাদের সন্তান আব্দুল আহাদ মর্তুজা।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, আব্দুল আহাদ মর্তুজার সঙ্গে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কাজী অফিসে তরুণীর বিয়ে হয়। আব্দুল আহাদের বাবা মর্তুজা সিদ্দিক চৌধুরী তাদের এই বিয়ে মেনে নেননি। পরে ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে তারা দ্বিতীয়বার বিয়েতে আবদ্ধ হন। একপর্যায়ে পারিবারিক চাপে আব্দুল আহাদ ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তরুণীর সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদ ঘটান। তখন বাধ্য করে তরুণীর কাছ থেকে সই নেওয়া হয়। বিচ্ছেদের পর আব্দুল আহাদ আবার তরুণীর সঙ্গে যোগযোগ শুরু করেন। নানা আশ্বাস দেখিয়ে একই বছরের ১ জুলাই তারা আবার বিয়েতে আবদ্ধ হন। দেনমোহর ধরা হয় এক কোটি টাকা। বিয়ের কিছু দিন পর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আব্দুল আহাদের পরিবারে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ নিয়ে তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেন আব্দুল আহাদ। শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আব্দুল আহাদের নাসিরাবাদের বাসার সামনে যান তরুণী। সেখানে তাকে পথরোধ করে মারধর করা হয়। হত্যার উদ্দেশ্যে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়। গলা চেপে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করা হয়। চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
যশোরের শার্শা উপজেলার যাদবপুর এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার পাঁচ বছরের বিয়ের সর্ম্পক। তার সংসার করার জন্য আমি পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করছি। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে নিচ্ছে না। এজন্য আমি স্ত্রীর অধিকার আদায়ে অনশন শুরু করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব।’
জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে ওই নারী থানায় মামলা করেছেন। এরপর পুলিশ তার শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। আদালতের মাধ্যমে তিনি জামিনে রয়েছেন। একই সময় আদালত ওই নারীকে সেফহোমে থাকার আদেশ দেন। তাদের বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ের। কিন্তু সেফহোম থেকে বের হয়ে কেন অনশন করছেন, সেটি ওই নারী ভালো বলতে পারবেন।’