লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৫৪ এএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:১৭ পিএম
বইসহ নবদম্পতি। প্রবা ফটো
ভাষার মাসে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে একটি অসাধারণ ঘটনা ঘটেছে। এক নববধূ শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন ২০০টি বই নিয়ে। উদ্দেশ্যে বাড়িতে ‘বউ-শাশুড়ি বই ঘর’ গড়ে তোলা। নববধূর এমন শ্বশুরবাড়ি যাত্রা এলাকায় তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মহান এ স্বপ্নের মধ্যমণি নববধূ মেহেরুন নেছা মুমু। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তিনি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ২০০ বই নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যান।
পরের দিন মঙ্গলবার মুমু, মুমুর মা, শাশুড়ি ও শ্বশুরের সঙ্গে প্রতিদিনের বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর প্রতিবেদকের কথা হয়েছে।
মুমু জানান, উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের চরফলকন গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে সোমবার তিনি বিভিন্ন লেখকের বইগুলো নিয়ে আসেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন বাহারি পদের পিঠা। এসব পিঠা প্রতিবেশীসহ শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মুমু চর ফলকন গ্রামের ডা. অবাদুল হক চেয়ারম্যান বাড়ির মহিউদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকার ইডেন কলেজের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। একই গ্রামের রমজান আলী মৌলভী বাড়ির মাকছুদুর রহমানের ছেলে তরুণ আইনজীবী এমরান হোসেন নিখিলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মুমুর বউভাতের আয়োজন করা হয়। বউভাত অনুষ্ঠানের একদিন পর বই নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন এ নববধূ।
মুমুর পরিবার ও স্বজনরা জানায়, মুমু বইপ্রেমী। বই সংগ্রহ ও পড়া তার প্রিয় শখ। শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া সব বই তার পড়া শেষ। প্রায় সব বই তার নিজের কেনা। অবশ্য অল্পকিছু বই জন্মদিনসহ বিভিন্ন দিবসে উপহার পেয়েছেন মুমু। ৮-১০টি বই স্কুল-কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে। বাকি বইগুলো বিভিন্ন সময় টাকা জমিয়ে কিনেছিল মুমু। এর মধ্যেই তার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদেরই রয়েছে শতাধিক বই।
এদিকে নিখিল তার স্ত্রী মুমুর আনা বইয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। এতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বেশ প্রশাংসামূলক মন্তব্য করছেন।
মুমুর মা ছালেহা বেগম জানান, তার মেয়ের প্রিয় শখ বই পড়া। শাড়ি-চুড়ি, কসমেটিকসে আগ্রহ নেই। ছোট বেলা থেকেই টাকা জমিয়ে বই কেনা ছিল তার প্রধান অভ্যাস। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় তার সংগ্রহে থাকা সব বই নিয়ে গেছে।
মুমুর শাশুড়ি কামরুন নাহার বলেন, আমার মেয়ে নেই। দুই ছেলে। ছোট ছেলে বুয়েটে পড়ে। বাড়িতে আমি একা। বড় ছেলের সুবাদে একটা মেয়ে পেয়েছি। আমার এ লক্ষ্মী মেয়ে আসার সময় অনেক বই নিয়ে এসেছে। এতে আমি খুবই খুশি। এখন থেকে আমিও টাকা জমিয়ে বউকে বই উপহার দেব।
মুমুর শ্বশুর মাকছুদুর রহমান বলেন, বিষয়টি অবাক করার মতো। ভাগ্যগুণে এমন বউ পেয়েছি।
নববধূ মেহেরুন নেছা মুমু বলেন, বই কেনা ও পড়া আমার শখ। বই উপহার পেতে খুব ভালো লাগে। বইগুলো বাবার বাড়িতে রেখে আসতে মন চাইছিল না। এজন্য সঙ্গে করে নিয়ে আসলাম। স্বপ্ন দেখছি শ্বশুর বাড়িতে ‘বউ-শাশুড়ি বই ঘর’ নামে একটি লাইব্রেরি গড়ব। এলাকার বউ-শাশুড়িরা এখানে বই পড়বে। এতে বউ-শাশুড়িদের মধ্যে হৃদ্যতাও বাড়বে।