চুয়াডাঙ্গা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:২৪ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৪৪ পিএম
দুরন্ত মেয়েটি এখন বিছানার কোণে নীরব সময় পার করে। প্রবা ফটো
মেয়েটির বয়স ১০ বছর। ছোটবেলা থেকে দারুণ দুরন্তপনা সে। দুষ্টুমি-হাসিখুশিতে মাতোয়ারা মেয়েটি একাই পরিবারকে উল্লাসে ভরিয়ে রাখত। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ পায় তার মেধার তীক্ষ্ণতা। পারদর্শিতা আছে চিত্রাঙ্কনেও। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু থেকে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলাফল করে আসছে সে।
কিন্তু কে জানত– এই মেয়েটির শরীরে বাসা বাঁধবে ‘মরণব্যাধী’! তাহমিদ খন্দকার আরাবী নামের শিশুটি এক বিরল ব্ল্যাড ক্যানসারে আক্রান্ত; চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ইমিউন ডিজরেগুলেশন উইথ সিস্টেমিক হাইপার ইনফ্লামেশন সিনড্রোম’। এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা অস্তিমজ্জা প্রতিস্থাপন।
মেয়েটির বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌর শহরের মোবারকপাড়ায়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনির খন্দকার ও স্কুলশিক্ষক পিয়ারি খানম দম্পতির ছোট কন্যা সে। তার বড় বোন এবার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়– ঘরের একটি কক্ষের বিছানার এক পাশে কাত হয়ে শুয়ে আছে আরাবী। নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। যেন বাঁচার আকুতি নিয়ে কিছু বলতে চায় সে।
আরাবী প্রতিদিনের বাংলাদেশের কাছে বলেছে, বিছানায় শুয়ে থাকার এই জীবন তার আর ভালো লাগছে না। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে যেন সে ঘরবন্দি। আশপাশে নেই খেলার সাথি, স্কুলের সহপাঠী। সবাইকে তার ভীষণ মনে পড়ে। সে সবার সঙ্গে আবার খেলায় মাততে চায়। শ্রেণিকক্ষে ফিরে প্রিয় শিক্ষকের পাঠদান শুনতে চায়। এসব বলতে না বলতেই গুমরে কান্না শুরু করল আরাবী। আর কোনো কথাই তার মুখ দিয়ে বের হলো না।
অদম্য মেধাবী মেয়েটির জন্ম ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি। তার শরীরে বিরল রোগটির আঁচ লেগেছে– শিক্ষাজীবনে পা দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর একটু একটু টের পায় পরিবারের সদস্যরা। শুরুর দিকে প্রায়ই আরাবীর জ্বর ও শরীর ব্যথা হতো। শুরু হয় চিকিৎসা। দেশের অনেক হাসপাতালে নিয়েও কিনারা পায়নি পরিবার। একপর্যায়ে আরাবীকে নেওয়া হয় ভারতে। একে একে ছয়বার তাকে ভারতের বিভিন্ন চিকিৎসককে দেখানো হয়। চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়ে পরিবার। আরাবীর ক্যানসার ২ ফেব্রুয়ারি নিশ্চিত করেন বেঙ্গালুরুর নারায়ানা হাসপাতালের চিকিৎসক সুনীল ভাট।
পরিবার জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা লিটল অ্যাঞ্জেলস স্কুলের শিক্ষার্থী আরাবী। এখন সে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ বছরের জানুয়ারির শুরু থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে তার। যত দিন যাচ্ছে ততই বিমর্ষ হয়ে পড়ছে আরাবী। ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে। তেমন কিছু খেতে পারছে না। ফলের জুস তৈরি করে খাওয়ানো হচ্ছে। এখন শুধু সারা দিন চুপচাপ থাকে। ভালো ইংরেজি জানে আরাবী। ফোনে দিনভর ইন্টারনেটে খুঁজে বেড়ায়– তার রোগটির চিকিৎসা আসলে কী, কোথায় হয়, কীভাবে হয়।
চিকিৎসকের মাধ্যমে পরিবার জেনেছে, আরাবীর বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন চিকিৎসা ব্যয় পড়বে প্রায় এক কোটি টাকা।
আরাবীর মা স্কুলশিক্ষক পিয়ারি খানম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মেয়ের চিকিৎসা করাতে যে পরিমাণ অর্থের সংস্থান প্রয়োজন, আমাদের মতো পরিবারের জন্য তা অনেকটা দুঃসাধ্য। আমার দুরন্ত মেয়েটি আবার ক্লাসে ফিরতে চায়, সবার সঙ্গে হাসতে চায়, নতুন করে বাঁচতে চায়। মেয়েকে বাঁচাতে আমি মানুষের কাছে হাত পাতছি। আপনারা আমার মেয়েকে বাঁচানোর জন্য একটু সহযোগিতা করুন।’
আরাবীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিকাশ কুমার দত্ত বলেন, ‘মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী। তার এই বিরল রোগের কথা শুনে আমি খুব মর্মাহত হয়েছি। সে সব সময় পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে। আমি তার জন্য দোয়া করি। দ্রুত সে সুস্থ হয়ে উঠুক। আবারও আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। শিক্ষক হিসেবে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আমার আহ্বান– আরাবীকে বাঁচাতে আপনারা সহযোগিতা করুন।’
আরাবীর পরিবার মেয়ের চিকিৎসা ব্যয় বহন করার সহযোগিতায় মানুষের দুয়ারে হাত বাড়িয়েছে। যে কারও আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য খোলা হয়েছে ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট। টাকা পাঠানোর জন্য মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ নম্বর ০১৯১২৯৮৮৪৩৭, নগদ নম্বর ০১৯১২৯৮৮৪৩৭ এবং রকেট নম্বর ০১৯১২৯৮৮৪৩৭০। কেউ চাইলে যমুনা বা জনতা ব্যাংকের মাধ্যমেও সহযোগিতার করার সুযোগ রয়েছে। যমুনা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ১১০১০০৬৪৫৫৩৭৯– হোল্ডারের নাম সর্দার পিয়ারি খানম, শাখা দর্শনা। জনতা ব্যাংকেরও দর্শনা শাখায় সর্দার পিয়ারি খানমের নামে ০১০০০৩২৫৪৯৪৭৫ এই অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা পাঠানো যাবে।