× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

রোগা পশুপাখি, জরাজীর্ণ রাইডে দর্শনার্থীরা

রেজাউল করিম, গাজীপুর

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৩ পিএম

আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৪:২০ পিএম

গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বেশিরভাগ রাইডের অবকাঠামো সংস্কারে নেই কোনো উদ্যোগ। প্রবা ফটো

গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বেশিরভাগ রাইডের অবকাঠামো সংস্কারে নেই কোনো উদ্যোগ। প্রবা ফটো

দেশের সবচেয়ে বড় জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। ৩৮১ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা পার্কটি ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয়। পার্ক প্রতিষ্ঠার সময় কয়েক ধাপে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন প্রাণী আমদানি করা হয়। এরপর মারা যাওয়াসহ বিভিন্নভাবে অনেক প্রাণী কমলেও শূন্যতা পূরণের উদ্যোগ নেই। দিন দিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে পার্কটি। চোখে পড়ছে না সৌন্দর্যবর্ধন কিংবা সংস্কারের কোনো কাজও। এতে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ হারাচ্ছে পার্কটি। রয়েছে জনবল সংকটও। 

সাফারি পার্ক সূত্রে জানা হেছে, বর্তমানে পার্কে রয়েছে ৮টি বাঘ, ৪টি সিংহ, নতুন বাচ্চাসহ ২৭টি জেব্রা, জিরাফ ২টি, ওয়েল ফিশ ১১টি, নিলগাই ৯টি, গয়াল ১৪টি। এ ছাড়া রয়েছে সাম্পা হরিণ ৬টি, হাতি ৮টি, জলহস্তী ৪টি, চিত্রা হরিণ শতাধিক, ময়ুর শতাধিক, কুমির ১১টি, ঘড়িয়াল ৫টি, বেশ কয়েকটি উল্লুক ও কয়েক হাজার দেশি বিদেশি পাখি। প্রতিষ্ঠার সময় কয়েক ধাপে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন প্রাণী আমদানি করা হয়। এরপর বিভিন্নভাবে অনেক প্রাণী কমলেও শূন্যতা আর পূরণ করা হয়নি। 

পার্কে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে দর্শনার্থীরা। বগুড়া সদর এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসেছেন শিক্ষক মাফুজা আক্তার। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পার্কে এসেছিলাম। পার্কটি নিয়ে যা শুনেছিলাম তার কিছুই দেখতে পাইনি। পশুপাখি রোগা হয়ে আছে। অবকাঠামো অনেক কিছুই জারাজীর্ণ। বেশি কিছু দেখার বা উপভোগ করার নেই। ছেলেমেয়েদের নিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। 

তার মতো শত শত দর্শনার্থী ঘুরে যাচ্ছে হতাশ হয়ে। একবার এসেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। বেড়াতে এসে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে দিচ্ছে নেগেটিভ রিভিউ, কেউ কেউ প্রকাশ্যেই বিরক্তি প্রকাশ করেছে। এতে দিন দিনে আকর্ষণ হারাচ্ছে সাফারি পার্কটি। 

জৌলুস হারিয়েছে পার্কের এসব অবকাঠামোও। সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের ভেতরের বিশালাকার লেকে প্যাডেল বোটগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। সাফারি পার্কের উত্তর-পশ্চিম অংশের বিশাল এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত শিশুপার্কের অবস্থাও জরাজীর্ণ। বাইরে থেকে দেখতে সুন্দর মনে হলেও বেশিরভাগ রাইড ভাঙা। সেখানে ১৫টি রাইডের মধ্যে মাত্র পাঁচটি সচল। যা প্রতিষ্ঠার পর আর সংস্কার করা হয়নি। বিশালাকার লেক ভর্তি ছিল বিচিত্র প্রজাতির হাঁস ও পাখি দিয়ে। বয়সের কারণে ও রোগাক্রান্ত হয়ে প্রাণী মারা গেলেও কর্তৃপক্ষ নতুন করে আমদানির উদ্যোগ নেয়নি। এতে সাফারি পার্ক বিমুখ হয়ে পড়েছে পর্যটকরা। 

সাফারি পার্কে শুরুতে ৫০ টাকায় টিকিট কেটে মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। এরপর পার্কের বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থান ও শিশুদের পার্কে আলাদা করে টিকিট নিতে হয়। ৪টি পাখিশালা ও ১টি অ্যাকুরিয়াম ঘুরে দেখতে জনপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১২০ টাকা। শিশুপার্কের প্রতিটি রাইডের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা করে। ইন্দোনেশিয়ার কইকাপ মাছের খেলা দেখতে ৬০ টাকা। ধনেশ এলাকায় যেতে হয় ১০০ টাকা দিয়ে। একোর সাফারিতে গাড়িতে ঘুরতে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে দিতে হয়। ৫০ টাকার টিকিট কেটে কয়েকটি বানর, চিল, শুকুন, দুটি আজগর, কয়েকটি কুমির, ঘড়িয়াল, উল্লুক আর দুটি জলহস্তী দেখে অসন্তুষ্ট দর্শনার্থীরা। শুধু তাই নয়, ঝুলন্ত ব্রিজ পারাপারে দিতে হয় ১০ টাকা। এমন বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আলাদা করে খরচের বিষয়েও বিরক্ত দর্শনার্থীরা। 

রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজ থেকে এসেছেন মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, কলেজ থেকে ঘুরতে এসেছি। জয়গাটা অনেক বড়, কিন্তু দেখার মতো বেশি কিছু নেই। যেমন শুনেছি বাস্তবে তার মিল নেই। এ ছাড়া ভেতরে ঢুকে আলাদা করে টিকিট কাটতে হয়। বিশেষ করে, বিভিন্ন পশু-পাখি দেখা ও ঝুলন্ত ব্রিজে টাকা নেওয়ার বিষয়টি। তাই হতাশ হওয়া ছাড়া কিছু বলার নেই। 

স্থানীয় এমরান হোসেন বলেন, কয়েক বছর আগেও সাফারি পার্ক নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। কিন্তু এখন অনেক কম লোকজন ঘুরতে আসে। এলাকার লোকজন তো পার্কে যায়না, দূরের লোকজন আসে। এসেও ভালো কিছু না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। এরপর নানা অনিয়ম তো আছেই।

সংকট রয়েছে লোকবলেরও। সাফারি পর্কের বিভিন্ন বিভাগে ২৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্থলে রয়েছে মাত্র ৭০ জন। এর মধ্যে ৩২ জন নিয়োগপ্রাপ্ত, আর ৩৮ জন কাজ করছেন মাস্টাররোলে। পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পার্কের কিছু সমস্যা সমাধানও করা হয়েছে। তারপরও অনেক সমস্যা রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর পার্কে নতুন কোনো প্রাণী আনা হয়নি। আমাদের লোকবল কম। চিকিৎসকেরও সংকট রয়েছে। সংকটের বিষয়টি কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এরপরও কোনো সমাধান হয়নি।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা