প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪ ০৯:১৪ এএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৬:৩০ পিএম
সায়েম সোবহান আনভীর
কেউ ডাকে মাফিয়া গডফাদার, কেউবা মাফিয়া ডন। চলনে-বলনেও রয়েছে মাফিয়াগিরির ভাব। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার পরিচিতি- ‘এক গাড়ি ও এক নারী দ্বিতীয়বার ব্যবহার করেন না তিনি।’ ভূমিদস্যু এক ‘রাজপরিবারে’ জন্ম নেওয়া কথিত এই রাজপুত্রের নাম সায়েম সোবহান আনভীর। বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি তিনি। এই গ্রুপে ভাইদের মালিকানা থাকলেও তা নিশ্চিহ্ন করে দিতে নিজেকে মানুষের কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন ‘এবিজি’ অর্থাৎ আনভীর বসুন্ধরা গ্রুপ নামে।
এবার এই মাফিয়ার চোখ পড়েছে রূপগঞ্জের ৫টি ইউনিয়নের ওপর। কায়েতপড়া, রূপগঞ্জ, দাউদপুর, কাঞ্চন, ভোলাব ইউনিয়নের সব জমি দখল করে নিয়ে সেখানে তিনি গড়ে তুলবেন আলাদা একটি সাম্রাজ্য। তার ইচ্ছা- এই পাঁচটি ইউনিয়নে গির্জা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, মাদ্রাসা, এতিমখানা, খেলার মাঠ- কিছুই রাখবেন না। সব জমি দিয়ে দিতে হবে বসুন্ধরা গ্রুপকে। এসব দখল বাণিজ্য করতে গিয়ে ক্রমেই তিনি হয়ে উঠেছেন ভূমিখেকো দানব। নিজের নানা অপকর্ম ঢাকতে এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ব্যবহার করছেন নিজেদের প্রতিষ্ঠিত তিনটি পত্রিকা, একটি অনলাইন এবং নিউজ চ্যানেলকে।
গালগল্প ছেপে ও প্রচার করে প্রতিনিয়ত তারা ঘায়েল করছেন সম্মানিত ব্যক্তিদের। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ৩ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রূপগঞ্জে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় দাউদপুর ইউনিয়নের কলিঙ্গা এলাকায় শনিবার দুপুরে গোলাম দস্তগীর গাজী এমপির সমর্থকরা প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। একই ঘটনা নিয়ে তাদের মালিকানাধীন কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তারে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সন্ত্রাসী বাহিনী দাউদপুর ইউনিয়নের কলিঙ্গা গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচূর ও ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে।’
এলাকাবাসী বলছেন, দাউদপুরের একই ঘটনা নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দুটি পত্রিকায় দুজন সম্মানিত ব্যক্তিকে জড়িয়ে আলাদা সংবাদ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে প্রকৃত রহস্য। তারা হাস্যরস করে বলছেন, নিজেরাই ঘটনা ঘটিয়ে এখন বলছে- ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না।’ আসলে সংসদ নির্বাচনের পর রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় যে সকল হামলা ও সংঘাতের ঘটনা ঘটছে তার নেপথ্যে রয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। তিনি সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছেন।
এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, আনভীরের টার্গেট হচ্ছে পাঁচটি ইউনিয়নের ৫০ থেকে ৭০ হাজার বিঘা জমি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া। দাউদপুরে মাত্র ৫২০ বিঘা জমি কিনে ১২০০ বিঘা জমির ওপর বাউন্ডারি নির্মাণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এর আগে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ফ্যাক্টরির জন্য কেনা ৪২ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে পার্শ্ববর্তী আরও ২০০ বিঘা নিরীহ মানুষের জমি দখল করে বাউন্ডারি নির্মাণ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। কায়েতপাড়া এলাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে এর আগেও হাজার হাজার বিঘা জমি দখলে নেয় ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাফিয়া আনভীরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, দখল দৌরাত্ম্যে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন রূপগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনের পর আনভীরের দানবীয় আচরণে বিভিন্ন এলাকায় ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, থানা এবং আদালতে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েও তারা বারবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের কোনো কর্তার নাম দেখলেই কেউ মামলা নিতে চায় না। বসুন্ধরা গ্রুপের অত্যাচারে অসহায় হয়ে পড়েছেন রূপগঞ্জবাসী। এ অবস্থায় তারা কোথায় যাবেন, কে তাদের ছায়া দেবেন? ভূমিদস্যুদের হাত থেকে বাঁচাতে মানবতার মা, জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রূপগঞ্জবাসী