মধ্যাঞ্চলীয় অফিস
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৫:১৩ পিএম
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৬:১৮ পিএম
লিটার ১০ টাকায় দুধ বিক্রি করছেন এরশাদ উদ্দিন। ২০২৩ সালের রমজানে। প্রবা ফটো
দেশে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতার মধ্যেই আসন্ন রমজান মাসে লিটার ১০ টাকায় দুধ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন কিশোরগঞ্জের খামার ব্যবসায়ী এরশাদ উদ্দিন। প্রতিবছরই রমজানে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করেন এ ব্যবসায়ী। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
রবিবার (৩ মার্চ) রাতে নিজের ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এরশাদ উদ্দিন লিখেন, রমজানে প্রতিদিন যে কেউ আমার খামার থেকে ১০ টাকা লিটার দরে সর্বোচ্চ ১ লিটার দুধ কিনতে পারবেন।
তিনি লিখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আসছে রমজান, প্রতি বছরের মতো এবারও ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ রোজায় প্রায় ২ টন দুধ সরবারহ করা হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের খামার জে,সি, এগ্রো দুগ্ধ উৎপাদন ও গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প। আমাদের খামারের উন্নতির জন্য দোয়া চাই।’
জানা গেছে, এরশাদ উদ্দিন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর রৌহা গ্রামের বাসিন্দা। চার বছর আগে এরশাদ উদ্দিন নিজ এলাকায় জে, সি, এগো ফার্ম নামে একটি খামার গড়ে তোলেন। তার খামারে দুগ্ধ ও মোটাতাজাকরণের তিন শতাধিক গরু রয়েছে। এরশাদ উদ্দিন বাংলাদেশ মিলস্কেল রি-প্রসেস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
এরশাদ উদ্দিনের খামারে বর্তমানে ২০টি গরু দুধ দিচ্ছে। প্রতিদিন খামার থেকে ৭০-৭৫ লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। রমজান মাস জুড়ে সেই দুধ তিনি ১০ টাকা লিটার দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে কেউ তার খামার থেকে ১০ টাকা লিটার দরে সর্বোচ্চ এক লিটার দুধ কিনতে পারবেন। প্রতিদিন ৬৫ থেকে ৭০ জনকে ১ কেজি করে দুধ দেওয়া হবে।
এরশাদ উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, এই উদ্যোগ কারোর বাহবা নেয়ার জন্য না। আমার উদ্দেশ্য হলো আমার জায়গা থেকে মানুষের জন্য সামান্য কিছুও যদি করা যায়। ইফতার ও সেহরির সময় সাধারণ মানুষ দুধ পান করে মন থেকেই দোয়া করবেন। তাতেই আল্লাহ খুশি হবেন। আমি বিশ্বাস করি, আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গা থেকে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করলে আমাদের দেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
এমন মহৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে এরশাদ বলেন, রমজান আসলেই এলাকায় দুধের চাহিদা বেড়ে যায়। হাট-বাজারে এক কেজি দুধ ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়। ১০০ টাকা দরে দুধ কিনে নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয় করে খাওয়ার ক্ষমতা নেই। এ বিষয়টা চিন্তা করেই তাদের জন্য নাম মাত্র ১০ টাকা মূল্যে ৬৫ থেকে ৭০ জনকে ১ লিটার করে দুধ প্রতিবারের মতো এবারের রমজানে দেওয়া হবে। আবার অনেক মানুষকে বিনামূল্যেও দুধ দেওয়া হয়। প্রথম রমজান থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়ে চলবে রমজানের শেষদিন পর্যন্ত।
তিনি আরও জানান, পুরো রমজানে আমার খামারে যা দুধ উৎপাদন হবে সবই ১০ টাকা করে বিক্রি করা হবে। সেই হিসাবে এই রমজানে ২ টন দুধ ১০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করা হবে। প্রতি জন দৈনিক সর্বোচ্চ এক লিটার দুধ কিনতে পারবেন।
রৌহা গ্রামের দিনমজুর রাসেল হোসেন এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, রমজানে দুধের চাহিদা থাকে। তাই এ সময় দুধের দামও থাকে বেশি। অনেকের দুধ কেনার সামর্থ্য থাকে না। কিন্তু এরশাদ ভাই কয়েক বছর ধরে এলাকার মানুষদের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা করেছেন। যার ফলে রমজানে দুধ খেতে পারি। তিনি মানুষের বিপদের বন্ধু। আমরা এলাকাবাসী তাকে নিয়ে গর্ব করি।
এরশাদ উদ্দিনের ১০ টাকা লিটার করে দুধ বিক্রির এই উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছেন নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল সেলিম। তিনি বলেন, রমজানে কয়েক বছর ধরে ১০ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করছেন এরশাদ উদ্দিন। তার এমন উদ্যোগে এলাকার নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষেরা দুধ খেতে পারছে।