চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমবাগান
মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩৫ পিএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৮:০০ পিএম
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, গাছের খাদ্য সরবরাহ কম থাকায় বড় গাছগুলোয় এবার মুকুল কম। প্রবা ফটো
প্রলম্বিত শীত আর বৈচিত্র্যপূর্ণ আবহাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমগাছগুলোয় এবার মুকুল কম এসেছে। নতুন সৃজন হওয়া ছোট গাছগুলোয় মুকুল এলেও বড় গাছগুলোর ডগায় মুকুলের পরিবর্তে বের হয়েছে ছোট কচিপাতা। ফলে জেলার চাষিরা আমের আশানুরূপ ফলন নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা বলছেন, গাছের খাদ্য সরবরাহ কম থাকায় বড় গাছগুলোয় মুকুল কম এবার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৩ আমগাছ রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আমগাছ রয়েছে ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৭০৫টি, শিবগঞ্জ উপজেলায় ২০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৮২৫টি, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৪ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৫০টি, নাচোল উপজেলায় ৪ হাজার ৩৩১ হেক্টর জমিতে ২৯ লাখ ৮ হাজার ৮৫০টি ও ভোলাহাট উপজেলায় ৩ হাজার ৬৬৩ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯৫টি আমগাছ রয়েছে।
বাগানের মালিকরা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবার আম বাগানগুলোয় মুকুলের পরিমাণ খুব কম। আবহাওয়া পরিবর্তনে মুকুল কম হয়েছে। আগামীতে আবহাওয়া ভালো থাকলে গাছে আরও কিছু পরিমাণে মুকুল আসতে পারে বলে ধারণা তাদের।
মুনজের আলম মানিক নামে একজন বলেন, ‘গত বছর প্রায় শতভাগ গাছে মুকুল ফুটে আম হয়েছিল। এবার আমের জন্য অফ ইয়ার আর আবহাওয়ার কারণে মুকুল কম। এখনও আশানুরূপ মুকুল আসেনি। প্রাকৃতিকভাবে এমন হয়েছে। বিষয়টি মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
আরেক বাগানি ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘আমগাছে এবার মুকুল অনেক দেরিতে এসেছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমের মুকুল আসতে পারে। এতে আম সংগ্রহ আরও ১০-১৫ দিন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যেসব সরকারি দপ্তর আম নিয়ে কাজ করে, তারা বাগানমালিক, চাষিদের জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিলে ভালো হতো।
আব্দুল জাব্বার নামে অন্য চাষি বলেন, বাগানের গাছগুলোয় এবার মুকুল খুবই কম। যার কারণে আমের ফলন কম হতে পারে। আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত গাছে মুকুল আসতে পারে। তবে এই সময়ের মধ্যে খুব একটা আসবে; তাও না।’
অনুন্নত জাতকে উন্নত জাতে পরিবর্তনের মাধ্যমে (টপ ওয়ার্কিং) আমবাগানের বড় গাছগুলোর যৌবন ফেরাতে পারলে মুকুলের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশাবাদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার। তিনি বলেন, গাছের বয়স নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে আম উৎপাদনের সক্ষমতা কমে যায়। এবার আম উৎপাদনে জন্য অফ ইয়ার বা কম ফলনের বছর। এ ছাড়া শীতের প্রভাব দীর্ঘদিন থাকায় গাছে আমের মুকুলের পরিমাণ কম। নতুন যেসব বাগান সৃজন হয়েছে, সেগুলোয় মুকুল এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গরমের প্রভাব আরেকটু বাড়লে আরও কিছু গাছে আমের মুকুল আসবে। কিন্তু যেটি আসবে তা ফলনে প্রভাব পড়বে অর্থাৎ সময়ের মধ্যে যে মুকুলটা বের হয়, সেটায় যে পরিমাণ আম উৎপাদন হওয়ার কথা সেটি দেরি হবে। তখন দেখা যাবে অনেক রকমের আম প্রায় একসঙ্গে পাকবে। এতে আমগুলো বাজারজাতে সমস্যা হতে পারে বা চাষিরা কম দাম পেতে পারে।’