মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ
সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৪:৪২ পিএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৭:৩৪ পিএম
মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ শিক্ষক রায়হান শরীফের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্র। মঙ্গলবার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে। প্রবা ফটো
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে এক শিক্ষার্থীকে গুলিবিদ্ধ করার পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে শিক্ষক রায়হান শরীফের নানা অপকর্মের তথ্য। তিনি নিজের কাছে রেখেছেন দেশি-বিদেশি অবৈধ অস্ত্র। এসব অস্ত্র দিয়েই তিনি মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের ভীতি প্রদর্শন করতেন– এমন অভিযোগ রয়েছে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের। শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর রায়হান শরীফের বাসায় অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
সিরাজগঞ্জ জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলহাজ উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘রায়হান শরীফের বাসা থেকে বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হবে।’
সোমবার (৪ মার্চ) বিকালে মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অষ্টম ব্যাচের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক রায়হান শরীফ। ঘটনাস্থল থেকে তাকে অস্ত্রসহ আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটি কোর্সের ভাইভা চলছিল। তখন শ্রেণিক্ষকে ৪৫ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। হঠাৎ সেখানে ঢুকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গুলি ছুড়লে তা তমালের ডান পায়ে বিদ্ধ হয়।
রাত সোয়া ১২টার দিকে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীর বাবা মো. আবদুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আমার ছেলের সহপাঠীরা জানায়– আমার ছেলের আইটেম পরীক্ষা কলেজের একাডেমি ভবনের চতুর্থ তলায় ডা. সামাউন নূরের কক্ষে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। পরীক্ষা চলাকালে বেলা ৩টার দিকে আসামি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে শিক্ষার্থীদের অহেতুক বকাবকি করেন। একপর্যায়ে ব্যাগ থেকে একটি পিস্তল বের করে আমার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন। গুলিটি আমার ছেলের ডান পায়ের ঊরুর ওপরের অংশে লেগে গুরুতর জখম হয়। সহপাঠীরা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে চাইলে আসামি অস্ত্র উঁচু করে সবাইকে ভয় দেখিয়ে বলেন, তোরা যদি ওকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাস, তাহলে তোদের সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলব। তাৎক্ষণাৎ ছেলের বন্ধুরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে সিরাজগঞ্জ থানা পুলিশ, ডিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামিকে অস্ত্রশস্ত্রসহ থানায় নিয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অস্ত্র উদ্ধার
মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের একাধিক শিকার্থী জানিয়েছেন, রায়হান শরীফের নানা অপকর্ম নিয়ে আগেও একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তিনি কলেজের ছাত্রীকে কু-প্রস্তাব দিয়েছেন, ছাত্রদের প্রায়ই ভয়ভীতি দেখিয়ে আসতেন। এমনকি রায়হান শরিফ কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বে নিজস্ব ক্ষমতা দেখিয়ে ফরেনসিক বিভাগে তিনি ক্লাস নিয়ে থাকেন। তিনি প্রায়ই ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে চলাফেরা করেন।
ডিবি জানায়, মঙ্গলবার সকালে রায়হান শরীফকে নিয়ে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও একটি পিস্তল তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা দুটি পিস্তল অবৈধ। এ ছাড়া রায়হান শরীফের বাসা থেকে ৮১ রাউন্ড গুলি, চারটি ম্যাগাজিন, দুটি বিদেশি কাতানা, দশটি অত্যাধুনিক বারমিজ চাকু, দুটি ব্রাশ নাকেল ও একটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে ডিবি।
সহপাঠীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রায়হান শরীফের বিচার দাবিতে ঘটনার পরপরই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে তারা আবার আন্দোলনে নামেন। কলেজের সামনের রাস্তা বন্ধ করে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
শিক্ষার্থীকে গুলি করার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রের বাবা একটি মামলা দায়ের করেছেন। আগ্নেয়াস্ত্র রাখার দায়ে আরও একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরপর তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’