× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী

ছোট যমুনার বালু লুট

প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪ ১২:৪৮ পিএম

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪ ১২:৫১ পিএম

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ছোট যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। প্রবা ফটো

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ছোট যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। প্রবা ফটো

তিন বছর ধরে বন্ধ বালুমহালের ইজারা। তারপরও এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিবিশেষের নেতৃত্বে দিন-রাত সমানতালে চলছে বালুকাটার মহোৎসব। প্রকাশ্যে অবৈধভাবে নদীর বালু উত্তোলন করা হলেও নিশ্চুপ প্রশাসন। মাঝেমধ্যে ‘লোক দেখানো’ ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালানো হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এমনি চিত্র দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলাজুড়েই। 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে আতিয়ার রহমান মিন্টু নামের এক ব্যক্তি ফুলবাড়ীর ছোট যমুনা নদীর বালুমহাল ইজারা নেন। কিন্তু অর্থ পরিশোধ না করায় তার ইজারা বাতিল করা হয়। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে কোনো ইজারাদার অংশগ্রহণ না করায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। একইভাবে ২০২২-২৩ থেকে এ পর্যন্ত ইজারা বন্ধ রয়েছে।

এরপরও থেমে নেই বালুকাটা। ব্যক্তিবিশেষের নেতৃত্বে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ স্থানে ছোট যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অপরদিকে বালুমহালের ইজারা বন্ধ থাকায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী চিরিরবন্দর থেকে বেশি দামে বালু কিনতে হচ্ছে স্থানীয়দের। প্রতি ট্রলি বালু এলাকাভেদে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শিবনগর বুজরুক সমশেরনগর (পাঠকপাড়া), রাজারামপুর বেলতলিঘাট, শিবনগর গাদারপাড়, বেলতলী ঘাটের পার্শ্ববর্তী রাজারামপুর গোপালপুর মাঠ ও দেবীপুর, দৌলতপুর ইউনিয়নের হরহরিয়ারপাড়, তেলীপাড়া, বারাইপাড়া, খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের বালুপাড়া, জমিদারপাড়া, মহদিপুরঘাট, লালপুর এবং পৌর এলাকার দক্ষিণ বাসুদেবপুর (বুড়াবন্দর) চম্পা রাইস মিলসংলগ্ন ঘাট থেকে ছোট যমুনা নদীর বালু দিন-রাত কেটে বিক্রি করছেন। একই সঙ্গে চলছে আবাদি জমি খনন করে বালু উত্তোলন ও বিক্রি। এসব বালু ট্রলি দিয়ে পরিবহন করায় প্রত্যেক এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। গ্রামীণ মাটির রাস্তা ভেঙে ফসলি জমিতে পড়ছে। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খোশিবনগর ইউনিয়নের শিবনগর গাদারপাড় এলাকার ছোট যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছেন গোলাম রব্বানী নামের একজন স্কুলশিক্ষক এবং রাস্তার কাজে নিয়োজিত ঠাকুরগাঁওয়ের এক ঠিাকাদার। এ কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গোলাম রব্বানী বেশকিছু যুবককে নদীর ঘাটে রেখেছেন। প্রতি ট্রলি বালু বিক্রি করা হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন অন্তত শতাধিক ট্রলি বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম রব্বানী বলেন, ‘কোনো প্রকার বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নই। একটি কুচক্রী মহল আমার নামে বদনাম ছড়াচ্ছে। তবে পাঠকপাড়া এলাকায় রাস্তার কাজের ঠাকুরগাঁওয়ের ঠিকাদার কিছু লোকজন দিয়ে নদীর বালু অবৈধভাবে তুলছে বলে শুনেছি।’

রাজারামপুর বেলতলীঘাট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছেন শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব। তিনি অবশ্য বালুকাটার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এলাকার মানুষ বালু পাচ্ছে না, আর আমিও বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আছি। সেই কারণে বালু তুলে বিক্রি করছি। এতে মানুষের উপকার হওয়ার পাশাপাশি আমিও কিছু উপার্জন করতে পারছি।’ 

পাঠকপাড়া এলাকার আক্কাস আলী নামের একজন বলেন, ‘রাস্তার কাজের জন্য ইউএনও সাহেব নদী থেকে বালু তোলার অনুমতি দিয়েছেনÑ এমন কথা বলে নদীর বালু লুট করছে একশ্রেণির বালুদস্যুরা। তবে প্রকাশ্যে দিন-রাতে নদীর বালু তোলা হলেও উপজেলা প্রশাসনের কোনো অভিযান দেখা যাচ্ছে না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বুজরুক সমশেরনগর (পাঠকপাড়া) এলাকার কয়েকজন বলেন, ‘প্রভাবশালীরা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। দীর্ঘদিন ধরে নদীর বালু তুলে বিক্রি করছে ওই মহলটি। প্রতিদিন নদী থেকে অন্তত ৩০-৪০ ট্রলি বালু তুলে বিক্রি করছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযান দেখা যায়। পরে আবার চলে বালুকাটার উৎসব।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালুকাটার সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীরা এলাকার উঠতি যুবকদের লাঠিয়াল হিসেবে সঙ্গে রেখেছেন। তারা প্রতিদিন হাজিরা টাকা পায়। এ ছাড়াও বালু বহনকারী ও বালু পয়েন্টে যাতায়াতকারী রাস্তার মোড়ে মোড়ে যুবক বসিয়ে পাহারার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রশাসনের কিংবা অন্য কোনো সংস্থার লোকজন ওই রাস্তায় ঢোকা মাত্রই মোবাইল ফোনে সতর্কবার্তা পৌঁছে যায় বালু পয়েন্টে। সতর্ক হয়ে সটকে পড়ে বালু উত্তোলনকারীসহ বহনকারী ট্রলি।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি ও পরিবহনের অপরাধে এরই মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু যেন কেউ তুলতে না পারে, সেজন্য এলাকার গ্রাম পুলিশদের নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে। বালু তোলার জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এটি একটি অপপ্রচার মাত্র।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা