× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বৈঠক

কেএনএফ অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে চায় ৫৯ বন্দির মুক্তি

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪ ২৩:১৬ পিএম

আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪ ০০:০২ এএম

কেএনএফ অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে চায় ৫৯ বন্দির মুক্তি

অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে রাজি হয়েছে বান্দরবানের সশস্ত্র সংগঠন কুচি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে ৫৯ জন বন্দির মুক্তি, কুচি চিন সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং খাদ্যসহায়তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটি প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি উদ্ভূত যেকোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। 

বন্দিমুক্তির বিষয়টি সরকারি পক্ষ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে এবং তাদের প্রকৃত বন্দির সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে তালিকা দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে সরকারপক্ষ। সুনির্র্দিষ্ট বন্দির তালিকা পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সরকার কাজ করবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে একজন বন্দি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন এবং আরো একজনের আগামী সপ্তাহে জামিনে মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। গত ৫ মার্চ বান্দরবানের রুমা উপজেলার বেথেলপাড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি এবং কেএনএফের প্রত্যক্ষ সংলাপে সাতটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে উভয়পক্ষ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।  

সমঝোতা স্মারকের তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এবং কেএনএফ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লাল জংময় স্বাক্ষর করেন। স্মারকের প্রথম দফায় বলা হয়েছে, কেএনএফ কর্তৃক উত্থাপিত ছয় দফা দাবি এবং প্রণীত খসড়া চুক্তির বিষয়ে পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেএনএফের দাবি অনুযায়ী, সব সম্প্রদায়ের লোকজনকে পোর্টার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। পোর্টার হচ্ছে সেনাক্যাম্পে বেসরকারি পর্যায়ে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজের সুযোগ। 

বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে কুচি-চিন সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্যসহায়তা কার্যক্রম পূর্বের মতো অব্যাহত থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরো তরান্বিত করা হবে। কুচি-চিন সম্প্রদায়ের লোকজন এলাকায় ফিরে আসার বিষয়ে আলোচনা হয়। এই পর্যায়ে কুচি-চিন সম্প্রদায় যাতে নিজ আবাসস্থলে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। 

অস্ত্র বিষয়ে উভয়পক্ষ সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, শান্তি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম চলাকালে কেএনএফ কোনো প্রকার সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত হবে না। একই সঙ্গে আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এছাড়া শান্তি-শৃঙ্খলায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কেএনএফ কর্তৃক নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখা হবে। 

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন এমন ব্যক্তিদের একজন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, আলোচনার সময় কেএনএফ নিজদের অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি অন্য সশস্ত্র সংগঠনগুলোর অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি উত্থাপন করেছে। জবাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অবৈধ অস্ত্র কেউই ব্যবহার করতে পারবেন না। এটা দণ্ডনীয়। আইন সবার জন্য সমান। শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ওই ব্যক্তির বক্তব্য অনুযায়ী, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিকল্প নেই। সেই পথেই সবাকে হাঁটতে হবে।’ 

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য সাংবাদিক প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কেএনএফের সঙ্গে সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। কেএনএফ সশস্ত্র কার্যক্রমে লিপ্ত হবে না এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যেভাবে আলোচনা এগিয়ে চলছে, তাতে আশা করা যায় খুব শিগগিরই ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে এবং স্থায়ী শান্তি ফিরবে।’

কুচি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করে ২০২২ সালের মে মাসে। এরপর সংগঠনটি ধীরে ধীরে সহিষ্ণুতার পথে হাঁটে। নিজদের ডেরা জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য ভাড়া দেয়। পরবর্তীতে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ডেরা থেকে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার ও প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম জব্দ করে। আবার পৃথক রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে কেএনএফ আলোচনায় আসে। একসময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাথান বম সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার স্ত্রী লাল সম কিম বম রুমা সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র নার্স। আন্দোলন শুরুর পর থেকে নাথান বম ঘরে অবস্থান করছেন না বলে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেন নাথান বমের স্ত্রী। সর্বশেষ গত ৬ মার্চ তাকে পুনরায় ফোন করা হলেও তিনি অপরপ্রান্ত থেকে সাড়া দেননি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য অনুযায়ী, রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন, বান্দরবান জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার দুর্গম এলাকায় তৎপরতা শুরু করে কেএনএফ। তারা বম, পাংখোয়া, লুসাই, খুমি, খেয়াং ও ম্রো—এই ছয় জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য সশস্ত্র আন্দোলন করছে বলে দাবি করে। সশস্ত্র কার্যক্রমের সময় ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর থেকে গত বছরের ২০ জুন পর্যন্ত রুমা, বোয়াংছড়ি এবং থানছি উপজেলায় কেএনএফের অতর্কিত হামলায় চার সেনা সদস্যসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংগঠনটি সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ও করেছে। সংঘাতের কারণে ওই সব উপজেলার অনেক অধিবাসী নিরাপত্তার স্বার্থে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। সংগঠনটি অপহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে ১২টি। এসব ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে। মামলায় নাথান বমসহ সংগঠনটির প্রায় ছয় শতাধিক ব্যক্তি আসামি। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৭ জন। তবে ৫ মার্চের আলোচনার সময় কেএনএফ দাবি করেছে, তাদের ৫৯ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি সরকার তদন্ত করবে বলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি তাদের জানিয়েছে।

কেএনএফ পাহাড়ি জনপদকে রক্তে রঞ্জিত করার পর ২০২৩ সালের ৩০ মে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রতিনিধি নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি করে সরকার। ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই কেএনএফর সঙ্গে প্রথম দফা ভার্চুয়ালি বৈঠক করে। এরপর গত নভেম্বর সরাসরি বৈঠকে বসে উভয় পক্ষ। ওই বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনার পর পরিস্থিতি শান্ত ছিল। অবশ্য গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিন অশান্ত সময় গেছে। সর্বশেষ ৫ মার্চ উভয়পক্ষ সাতটি বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে এবং আগামী ২২ এপ্রিল পরবর্তী বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা