কুমিল্লা সিটি নির্বাচন
তৈয়বুর রহমান সোহেল, কুমিল্লা
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪ ০৯:৩৩ এএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪ ০৯:৩৭ এএম
সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টারে ছেঁয়ে আছে কুমিল্লা সিটি। প্রবা ফটো
আফজাল-বাহার দ্বন্দ্বের রেশ ধরেই গত কয়েক বছর থেকে কুমিল্লা নগর আওয়ামী লীগে বহমান রয়েছে বাহার-সীমার বিরোধের ধারা। কাল শনিবার অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে লড়ছেন আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বড় মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনা। কম যান না প্রয়াত আফজল খানের কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমাও। গত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাহারের কাছে হেরে যান। সিটি নির্বাচনে সীমার প্রার্থী হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার বলয়ের নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। অনেকের মতে, এর মধ্য দিয়ে সীমা প্রকারান্তরে বাহারের সঙ্গে পুরোনো লড়াই-ই জারি রেখেছেন। যদিও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিমের পক্ষে সীমাবলয়ের কাউকে সেভাবে মাঠে নামতে দেখা যায়নি- এমন আলোচনাও রয়েছে।
অন্যদিকে সংসদ সদস্য হয়েও মেয়েকে জেতাতে মাঠ-ঘাট চষে বেড়িয়েছেন এমপি বাহার। অন্য তিন প্রার্থী তার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও তোলেন। তারপরও তাকে থামানো যায়নি। মেয়েকে জেতাতে কাউন্সিলর, ব্যবসায়ী, শিক্ষকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন তিনি। অনেক উদ্যোক্তা ও শিক্ষক সূচনার পক্ষে মাঠে কাজে করেছেন। ওয়ার্ডগুলোতে ছোট ছোট গুচ্ছে ভাগ হয়ে তার কর্মীরা প্রচার চালান। মহানগর আওয়ামী লীগ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগসহ দলের সবকটি কমিটি এমপি বাহারের নিয়ন্ত্রণে থাকায় প্রচারণায় বেশ এগিয়ে থাকেন সূচনা। অপরদিকে তানিমের পক্ষে আওয়ামী লীগের একটি অংশ সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। কুমিল্লা নগরীতে তিনি ৪০ বছর ধরে রাজনীতি করেন। যে কারণে শহরে তার ভালো পরিচিতি রয়েছে। তানিমের প্রচুর কর্মীও আছে। যারা প্রচারের শুরু থেকে শেষদিন পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
নির্বাচনে এমপি বাহারের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের বেশকিছু অভিযোগ তুলেছেন তানিম। এর মধ্যে তার কর্মীদের মারধর করার অভিযোগও রয়েছে। দল থেকে কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া না হলেও সূচনা নিজেকে একক প্রার্থী দাবি করায় বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তানিম। জবাবে সূচনা বলেন, তার জনপ্রিয়তা দেখে অন্য প্রার্থীরা ভীত।
অপরদিকে কুমিল্লা নগর বিএনপিতে ইয়াছিন-সাক্কু দ্বন্দ্ব নিয়েও যথেষ্ট আলোচনা রয়েছে। সিদ্ধান্ত অমান্য করে গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয় মনিরুল হক সাক্কুকে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রয়াত আরফানুল হক রিফাতের কাছে ৩৪৩ ভোটে পরাজিত হন তিনি। দলের আরেক প্রার্থী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক নিজাম উদ্দিন কায়সারও ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রায় ২৯ হাজার ভোট পান। এবারও সাক্কুর ভোটে ভাগ বসানোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন কায়সার। কায়সারের অভিযোগÑ সাক্কু মূলধারার বিএনপি করেন না। তিনি এমপি বাহারের সঙ্গে কমিশন ভাগাভাগিতে লুটপাট করেছেন। এমপি বাহার ও সাক্কু একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সাক্কুর দাবি, এমপি বাহার ও কায়সার একজোট হয়ে তাকে হারাতে চেষ্টা করছেন।
অবশ্য ভোটের মাঠে তুমুল জনপ্রিয় মনিরুল হক সাক্কু। হিন্দু সম্প্রদায় এবং বস্তির ভোটে ভালো দখল রয়েছে তার। কুমিল্লা নগরীর ২ লাখ ৪২ হাজার ভোটারের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজারই বস্তি এলাকার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের। তাদের বড় একটি অংশ সাক্কুর সমর্থক হিসেবে বিবেচিত হয়। এদিকে গত নির্বাচনে হঠাৎ ভোটের মাঠে নামলেও এবার ভালো প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছেন কায়সার। প্রচারণাও চালিয়েছেন বেশ জোরেশোরে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচারণার শেষদিনে নগরীর ১২নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। বাস প্রতীকের সূচনা কান্দিরপাড়, স্টেডিয়াম এলাকাসহ চকবাজার পর্যন্ত গণসংযোগ করেন। ঘোড়া প্রতীকের তানিম নগরীর ১, ১১, ১৩ ও ১৪ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। প্রচারণার শেষদিন নিজের বোনসহ কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ তোলেন ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি দাবি করেন, বহিরাগত লোকজন এনে তার কর্মীদের ওপর হামলা ও ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রার্থীদের যত অভিযোগ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভোট সুষ্ঠু হবে। মাঠে ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছিলেন নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মোট কেন্দ্র ১০৫টি। ভোট নেওয়া হবে ইভিএমে।