মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ
কক্সবাজার প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪ ১৭:২৪ পিএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪ ১৮:৪৮ পিএম
জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘাতের মধ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। এপারে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির নয়াপড়া সীমান্ত, ওপারে রাখাইনের ঢেঁকিবনিয়া এলাকা, মাঝে নাফ নদ। ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তোলা। প্রবা ফাইল ফটো
মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘাতের মোড় সীমান্ত এলাকা থেকে কিছুটা দূরে সরেছে। লড়াই চলছে রাখাইন রাজ্য ঘিরে– সেখানকার মংডু শহরের আশপাশের কয়েকটি গ্রামে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা পাঁচ দিন ধরে মিয়ানমারের আকাশে দেখতে পাচ্ছে ভিন্ন দৃশ্য। বেশিরভাগ সময় দেখা যাচ্ছে, দিনের আকাশে হঠাৎ হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে, ঠিক তখনই বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পায় এপারের বাসিন্দারা। এরপরই আকাশে ভেসে ওঠে কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া। তবে দিনের বেলার চেয়ে রাতে অনেক বেশি বিস্ফোরণের শব্দ, তার সঙ্গে ভেসে আসে গোলাগুলির আওয়াজ। এমন পরস্থিতিতে রাখাইনের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানির সীমান্ত বাণিজ্যে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (৮ মার্চ) সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা গেছে বলে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম। তিনি জানান, এ সময় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যে আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ভেসে ওঠে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে– মিয়ানমারের মংডু শহরের আশপাশের গ্রাম থেকেই এই শব্দ ভেসে আসছে।
টেকনাফের সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা জানায়, মিয়ানমারে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সংঘাত রাখাইনের মংড়ু শহরের আশপাশের গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। রবিবার থেকে মিয়ানমারের আকাশে হঠাৎ হঠাৎ দেখা মিলছে হেলিকপ্টার। যখনই কোনো হেলিকপ্টার চক্কর দেয়, তখনই গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। একই সময় মংডুর গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া আকাশে ভাসতে দেখা যায়। দিনে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও রাত হলেই ভোর পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ বেশি শুনতে পাচ্ছে এপারের বাসিন্দারা।
টেকনাফের জালিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, দিনের অবস্থা এমন থাকে যেন সেখানে সবকিছু অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু রাত গড়ালে ভোর পর্যন্ত ভেসে আসা শব্দে লড়াইয়ের তীব্রতা টের পাওয়া যায়।
টেকনাফের হ্নীলা সীমান্তের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাতে যে পরিমাণ শব্দ শোনা যাচ্ছে, দিনে তেমনটা শোনা যায় না। সীমান্তের মানুষের মধ্যে এখনও উদ্বেগ কাজ করছে।’
সীমান্ত বাণিজ্যে স্থবিরতা
এই সংঘাতের জের ধরে রবিবার থেকে রাখাইনের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানির সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয় আছে। রাখাইনের সিথুয়ে বন্দর থেকে টেকনাফে আমদানি পণ্যবাহী কোনো কার্গো ট্রলার কিংবা জাহাজ আসছে না।
এ ব্যাপারে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘রাখাইনে দেশটির যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে।’
স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগের কাস্টমস সুপার বিএম আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় প্রতিদিন অন্তত তিন কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হচ্ছে না।’
জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে রাখাইন রাজ্যের ওই দুই এলাকায় সংঘাতের তীব্রতার ব্যাপারে অবগত হয়ে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী– বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, রাখাইনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের তৎপর রাখা হয়েছে।