ইউএনওর কার্যালয়ে সাংবাদিককে সাজা
শেরপুর সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:৫৪ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪ ০০:৪১ এএম
দৈনিক দেশ রূপান্তরের নকলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানা। ফাইল ফটো
শেরপুরের নকলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে এক সাংবাদিককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দাবি, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি, সরকারি কাজে বাধা ও অসদাচরণের দায়ে তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে পরিবার বলছে, তাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে বিচারের দাবিও উঠেছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, প্রশাসন অতি উৎসাহী ও অতিরঞ্জিত হয়ে যে কাজটি করেছে, তা খুবই ন্যক্কারজনক। কারাবন্দি সাংবাদিকের দ্রুত মুক্তি চেয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) দৈনিক দেশ রূপান্তরের নকলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানাকে সাজা দেওয়া হয়। নকলা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল আরিফ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। পরে ওই সাংবাদিককে কারাগারে পাঠানো হয়।
যা ঘটেছে
মঙ্গলবার সাংবাদিক রানা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া উম্মুল বানিনের কার্যালয়ে তথ্য অধিকার আইনে এডিপি নামের একটি প্রকল্পের তথ্য চেয়ে আবেদন করতে যান। এ সময় সাদিয়া উম্মুল বানিন দাপ্তরিক আলোচনায় ছিলেন। পরে সাংবাদিক রানা ইউএনওর সহকারী শীলা আক্তারের কাছে আবেদনটি জমা দিয়ে রিসিভ কপি চান। এ সময় শীলা আক্তার তাকে অপেক্ষা করতে বলেন। রানা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তাকে আবারও রিসিভ কপির কথা বললে শীলা আক্তার ওই দাপ্তরিক আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। এ সময় শফিউজ্জামান ফোনে ভোগান্তির কথা জেলা প্রশাসককে জানালে শীলা বিষয়টি সাদিয়া উম্মুল বানিনকে জানান। একপর্যায়ে ওই সাংবাদিককে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়া হয়।
সেদিন কী হয়েছিল, এই প্রশ্নের জবাবে নকলার ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন বলেন, ‘সাংবাদিক রানা তথ্য চেয়ে আবেদন করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি তখনই তথ্য চান। আমি তাকে বলি, এখন আমার মিটিং আছে। তথ্য দেওয়ার জন্য আমার হাতে ২০ দিন সময় আছে। কিন্তু রানা সিএ শীলার কাছে থাকা ওই তথ্যের ফাইল টানাটানি করেন এবং নানা ধরনের অশালীন ভাষায় কথাবর্তা বলেন। তিনি অসদাচরণ করেছেন। এতে অফিসের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তাই আমি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলেছি।’
কেন তাকে সাজা দেওয়া হলো, শুক্রবার তার ব্যাখ্যা দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল আরিফ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাংবাদিক শফিউজ্জামানকে সরকারি অফিসে অনুপ্রবেশ করে হট্টগোল, সরকারি কাজে বাধা, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি ও অসদাচরণের অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৮৬০–এর ১৮৮ ধারায় এবং একজন নারী কর্মচারীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
যা বলছে সাংবাদিকের পরিবার
সাংবাদিক রানার স্ত্রী বন্যা আক্তার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘সাংবাদিক রানা মূলত প্রতিবাদী একজন মানুষ। তিনি যেখানেই অন্যায় দেখতেন সেখানেই প্রতিবাদ ও লাইভ দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এর জন্যই সবার কাছে তিনি অপ্রিয়। আসলে সেদিন উপজেলা অফিসে তেমন কিছু তিনি করেননি। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সরাসরি কথা বলতেন বিধায় পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত ছিল। তাকে যেকোনোভাবে ফাঁসিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবেন। সর্বোপরি আমার স্বামী সঠিক ধারার একজন মানবিক মনের মানুষ ও সাংবাদিক। আমি এ বিষয় নিয়ে গর্ববোধ করি। আমি আমার স্বামীকে যারা অন্যায়ভাবে ফাঁসিয়েছে তাদের সঠিক তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানাচ্ছি এবং আমার স্বামীকে মুক্তি দেওয়া হোক।’
ক্ষুব্ধ সহকর্মীরা চান সাংবাদিকের মুক্তি
জামালপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান ডল বলেন, ‘দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক গণমাধ্যমকর্মী তথ্য চেয়ে আবেদন করেও হয়রানির শিকার হয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজানো মামলা দিয়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’ অবিলম্বে এই জঘন্য ও ন্যক্কারজনক ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে শেরপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জল বলেন, ‘প্রশাসন অতি উৎসাহী ও অতিরঞ্জিত কাজ করেছেন। শেরপুর প্রেস ক্লাবের নেতাদের কিংবা প্রেস কাউন্সিলে বিচার দিতে পারতেন। তা না করে প্রশাসন যে কাজটি করেছে, তা খুবই ন্যক্কারজনক।’
জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘তথ্য চাওয়া ও পাওয়া নাগরিক অধিকার। সাংবাদিক রানা তথ্য আইন মেনেই তথ্য চেয়ে আবেদন করতে চেয়েছিলেন। রানাকে হয়রানি করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারাদণ্ড দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার।’