মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১১:০৮ এএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১১:২৪ এএম
ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধনে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফাইল ফটো
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ সাধারণ জনজীবন। নিয়মিত নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কার না করায় সেসব স্থানে মশার প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে অভিযোগ পৌরবাসীর। এমনকি দীর্ঘদিন মশা নিধনের কোনো কার্যক্রমও চোখে পড়েনি বলে জানান তারা। চিকিৎসকরা বলছেন- ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মশার উৎপাত বাড়ে। এ সময় মশার কামড়ে অ্যানোফিলিস, ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- শীতের দাপট কমতেই বেড়েছে মশার উপদ্রব। জেলা শহরের বড় বড় দোকানগুলোর ময়লা অবর্জনা, বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা নোংরা পানি এবং যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় এ অঞ্চলটি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে। পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে বসানো ডাস্টবিন ও আবর্জনা ফেলার স্থান নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার বিস্তার ক্রমশ বাড়ছেই। এ ছাড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন ড্রেন, ময়লা আর্বজনা যথাযথভাবে পরিষ্কার করছে না কর্তৃপক্ষ বলেও অভিযোগ পৌরবাসীর।
পৌরএলাকার সিসিডিবি মোড় এলাকার কালভার্টের নিচ দিয়ে বর্জ্য পদার্থ ও ময়লা পানির নিষ্কাশনের পথটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে সেখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে ওই জায়গাটি পরিষ্কার না করার ফলে মশার অন্যতম প্রজননস্থলে পরিণত হয়েছে।
পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন- ঋতুপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মশার উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কয়েল, স্প্রে বা মশারি টাঙ্গিয়েও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। কেউই স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। কিন্তু মশা নিধনের জন্য প্রতি বছর বাজেট থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। আর এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। তা ছাড়া মশার উৎপাতে স্কুল ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়াশোনাও চরম ব্যাঘাত ঘটছে।
পৌর এলাকার আলীনগর মহল্লার বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুমের শেষের দিকে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। গত প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে ব্যাপকভাবে মশার প্রকোপ বেড়েছে। মশার কারণে ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছে না। কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া কয়েল জ্বালালে সেই ধোঁয়ায় নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
পৌর এলাকার আরেক বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, গত ছয় মাসের মধ্যে এক দিনও পৌরসভার কাউকে মশা মারতে দেখিনি। ফগার মেশিনের আওয়াজও শুনিনি। কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়াতেই মশার এমন প্রকোপ বেড়েছে।
তানভীর আহমেদ নামে আরেকজন বলেন, পৌরএলাকার অনেক জায়গায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে দীর্ঘদিন থেকে। এতে বাসাবাড়ির পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। অত্যন্ত ধীরগতিতে চলমান এ কাজের জন্য ড্রেনগুলোয় পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ। অনেক এলাকায় ড্রেনের পানি চলে এসেছে সড়কের ওপর। দীর্ঘদিন জমে থাকা এসব নোংরা পানি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া ডাস্টবিন ও আবর্জনা ফেলার স্থানগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার বংশবিস্তার হচ্ছে।
স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকের চিকিৎসক আব্দুস সামাদ জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত মশা বংশবিস্তার ঘটায়। এ সময় মশার কামড়জনিত রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। মশার কামড়ে মানুষ অ্যানোফিলিস, ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এজন্য সকলেরই সচেতন থাকা প্রয়োজন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র নাজনীন ফাতেমা (জিনিয়া) বলেন- শীতের মৌসুম শেষে নতুন করে পৌর এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। বিষয়টিকে আমলে নিয়ে পৌরসভার পক্ষ থেকে মশক নিধন অভিযান শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগির পৌর এলাকায় মশার উৎপাত কমবে।