কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪ ১৫:১৭ পিএম
বিদ্যুতের হাইভোল্টেজ তার টানা হয়েছে বাড়ির ছাদ ও চালের ওপর দিয়ে। প্রবা ফটো
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৩ কেভি (কিলো ভোল্ট) শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের নিচে বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বসবাস করছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে ঝরে গেছে নির্মাণ শ্রমিক, রঙ মিস্ত্রিসহ কয়েক প্রাণ। আবার পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকেই। এখনও এসব পরিবার ও আশপাশের লোকজন বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে।
জানা গেছে, প্রায় ৪৫ বছর আগে ঝিনাইদহ থেকে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানা হয় কালীগঞ্জ পাওয়ার হাউস পর্যন্ত, যা ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ পৌরসভার শ্রীরামপুর, চাপালী, নদীপাড়া হয়ে আড়পাড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে গেছে। এই সঞ্চালন লাইনে ৩টি তারের প্রতিটিতে ৩৩ কেভি পাওয়ারসংবলিত। মাটি থেকে তারের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। যখন সঞ্চালন টানা হয়, তখন এই এলাকায় তেমন জনবসতি ছিল না। ক্রমে বসতি বাড়তে থাকে। তখন অনেকেই না জেনে এই তারের নিচে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক তাদের বাড়িঘর করতে বাধাও দেওয়া হয়নি।
বর্তমানে এই তারের নিচে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। বিদ্যুতের তার একেবারেই ঘরের চাল বা ছাদ ছুঁইছুঁই অবস্থায় রয়েছে। এই হাই ভোল্টেজ তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে ঝরে গেছে নির্মাণ শ্রমিক, রঙ মিস্ত্রিসহ কয়েক প্রাণ। আবার পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকেই।
অথচ বিদ্যুৎ আইনে আছে, সঞ্চালন লাইনের নিচে কোনো ঘরবাড়ি নির্মাণ করা যাবে না। এই সঞ্চালন লাইনের ডানে বামে কমপক্ষে ১০ ফুট জায়গা রেখে বাড়িঘর নির্মাণ করতে হবে। এসবের দিকে কোনো খেয়াল করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার অনেক বসতবাড়ির ওপর দিয়ে বিপজ্জনকভাবে ঝুলে রয়েছে হাই ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইনের তার।
কথা হয় আড়পাড়া (দরগাপাড়া) গ্রামের হারুন ড্রাইভারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে কয়েকজন এবং পঙ্গুত্ববরণ করছে অনেকেই। পৌর এলাকার (নদীপাড়া), আড়পাড়া, মধুপট্টি, মাঠপাড়া, দরগাপাড়া, চাপালী, শ্রীরামপুরসহ এই এলাকার বাসাবাড়ির ওপরে বিপজ্জনকভাবে ঝুলে আছে তার। কোমলমতি শিশু, বৃদ্ধাসহ সবাই খুবই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।’
চাপালী গ্রামের কলেজ শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘সঞ্চালন লাইনের যেভাবে মেরামত বা সংস্কার দরকার, সেভাবে করা হয় না। বর্তমানে লাইনটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। গত ২৫ বছরে এই এলাকায় বাড়িঘর নির্মাণ করতে গিয়ে শ্রমিকসহ ৪-৫ জন অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭ জন।’ আড়পাড়া গ্রামের ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘লাইনের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এত নিচ দিয়ে হাই ভোল্টেজের লাইন যাওয়ায় অনেকে বাসাবাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। আবার অনেকে বাসার কাজ শেষ করতে পারছেন না। এ কারণে অনেকের জমি পতিত পড়ে আছে।
জানতে চাইলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকোর) ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এটা অনেক আগে স্থাপিত। আমরা রক্ষণাবেক্ষণ করছি। আপাতত এই সঞ্চালন লাইন সরানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।’