সাতক্ষীরা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪ ১৮:২১ পিএম
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৪ ১৮:৪৪ পিএম
রাজিয়া খাতুন। ফাইল ছবি
বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশ নারী ফুটবলের পরিচিত মুখ রাজিয়া খাতুন। লাল-সবুজের জার্সিতে বয়সভিত্তিক দলে তিনি ছিলেন নিয়মিত সদস্য। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব- ১৮ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের শিরোপাজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও ছিলেন তিনি। নারী ফুটবলের সেই পরিচিতমুখ রাজিয়া। গ্রাম্য ডাক্তার ও ধরণী দিয়ে সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেছেন তিনি। তবে স্মৃতি হিসেবে রেখে গেছেন দুই দিনের ফুটফুটে শিশু রাজিব হোসেনকে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় বাবার কবরের পাশে রাজিয়াকে সমাহিত করা হয়। এর আগে বুধবার রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে মৌতলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাজিয়া। সাতক্ষীরা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে মৃত্যু হয় তার।
রাজিয়া খাতুনের মা জানান, রাজিয়ার আব্বা মারা যাওয়ার পর তাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম। রাজিয়া শুধু নিজের জন্য ভাবেনি। সে তার ভাইবোনদের ভরণপোষণেরও দায়িত্ব নিয়েছিল। তাই তো সে অধিকাংশ সময় ছুটি পেলেই বাবার বাড়িতে থাকত।
রাজিয়ার স্বামী এয়াম রহমান জানান, ২০১৮ সালে ন্যাশনাল টিমের খেলা চলাকালে রাজিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর এক বছরের প্রেম। সবার অজান্তে বিয়ে করি। পরে উভয় পরিবার মেনে নেয়। এরপর সবকিছু পারিবারিকভাবে চলতে থাকে। এরপর আল্লাহর রহমতে রাজিয়ার গর্ভে সন্তান আসায় নিয়মিত সে বাবার বাড়িতে থাকত।
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাস বাচ্চু জানান, রাজিয়া আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে, আমরা খুব মর্মাহত। রাজিয়ার রেখে যাওয়া শিশুপুত্র রাজিব ও তার অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদ মেহেদি বলেন, ‘ফুটবলার রাজিয়া সুলতানা দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। রাজিয়া শুধু নিজের কথা ভাবেনি, সে এলাকার উন্নয়নের কথাও ভেবেছিল।’ অসহায় রাজিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
২০১৮ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন রাজিয়া খাতুন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পেয়েছিলেন সংবর্ধনা ও ১০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল রাউন্ডে খেলেছিলেন রাজিয়া। রাজিয়া বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েছেন বছর চারেক আগে। এরপর ঘরোয়া লিগ খেলেছেন। তার মৃত্যুতে দেশের ফুটবলে নেমে এসেছে গভীর শোক।