× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু

তিনি বলেছিলেন, ‘জয় আমাদের হবেই’

সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৩ পিএম

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৬ পিএম

১৯৭৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মাসে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই স্মৃতিচারণ ও ওইদিনের বক্তৃতার বিষয়টি এভাবেই সবার সামনে উপস্থাপন করে জেলা প্রশাসন। ফাইল ফটো

১৯৭৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মাসে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই স্মৃতিচারণ ও ওইদিনের বক্তৃতার বিষয়টি এভাবেই সবার সামনে উপস্থাপন করে জেলা প্রশাসন। ফাইল ফটো

১৯৭৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কিশোরগঞ্জ এসেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি তখন তিনি জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল এক জনসমাবেশেও বক্তব্য দিয়েছিলেন। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। মুক্ত, স্বাধীন দেশে প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার জন্য জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেদিনের সেই সমাবেশস্থলে ছুটে এসেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। সারা মাঠে তিলধারণের জায়গা ছিল না। মাঠের বাইরে আশপাশের খোলা জায়গা, হর্টিকালচার সেন্টারের বিস্তীর্ণ বাগান, রাস্তাঘাট এবং বিভিন্ন ভবনের ছাদ এমনকি গাছের ডালে ডালে মানুষজন উঠে বসেছিল প্রিয় নেতাকে একনজর দেখবে বলে। 

সেদিনের সেই সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমার দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এনেও আপনারা স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল ভোগ করতে পারছেন না। আপনাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে আমিও আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছি না। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। প্রথমে দেশকে গড়ে তোলা প্রয়োজন। একটি আমগাছ লাগালেও ফল পেতে অন্তত তিন বছর সময় লাগে। আমি আপনাদের কাছে তিন বছর সময় চাই। ইনশাল্লাহ্ তিন বছর পর আল্লা চাহে তো আমি আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব।’ সেদিনের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু আরও বলেছিলেন, ‘ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে এনে দেশকে গড়া যাবে না। সকলে পরিশ্রম করে দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলব।’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমার জমি আছে, আমার মানুষ না খেয়ে থাকবে না’। সেদিন টানা প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু।

কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আরও বক্তৃতা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধু সরকারের শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ছাত্রনেতা গোলাম রব্বানী বুলবুল, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহম্মদ, মোস্তাফিজুর রহমান চুন্নু মিয়া, এম এ কুদ্দুস, মো. আবদুল হামিদ (সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি), মো. জিল্লুর রহমান (সাবেক রাষ্ট্রপতি) প্রমুখ। কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সেদিনের এই সমাবেশ পরিচালনা করেছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এম এ আফজল। 

২০২১ সালের ১৭ মার্চ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক আয়োজনে দীর্ঘ ৪৭ বছর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে আসার ঐতিহাসিক ঘটনাটি তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন কিশোরগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, উপপরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নূরুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ আফজল, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, এনডিসি মো. মাহমুদুল হাসান, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলারা বেগম আছমা, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল প্রমুখ। 

স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর আগমনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘১৯৬৪ সাল। আমি তখন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র এবং কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। দিন-তারিখ মনে নেই, তবে এটি মনে আছে যে, মুজিব ভাই ওই সময় একদিন কিশোরগঞ্জ এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সমাবেশে। প্রিয় নেতাকে কাছে থেকে দেখব, তাঁর সঙ্গে কথা বলবÑ এই ইচ্ছা থেকে ছাত্রলীগের দুই-তিনশ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে গেলাম রঙমহল সিনেমা হলের সামনে। অথচ হলের ভেতরে জায়গা থাকার পরও আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের ঢুকতে দিলেন না। তাদের বক্তব্য ছিল, এটা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠান নয়। তারপরও আমরা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকলাম। নেতা বের হলে প্রয়োজনে রাস্তার মধ্যেই তাঁর সঙ্গে দেখা করব, কথা বলব।’

আবদুল হামিদ বলেন, “সন্ধ্যার আগেই রঙমহল সিনেমা হলের সমাবেশ শেষ হলো। সবাই বেরিয়ে আসছেন। খুব সহজেই আমাদের দৃষ্টি কাড়লেন দীর্ঘদেহী মানুষটি। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান ধরলেন, ‘মুজিব ভাই যেখানে, আমরা আছি সেখানে’। এ স্লোগান শুনে শেখ মুজিবের দৃষ্টি পড়ল ছাত্রদের দিকে। তখন বঙ্গবন্ধু এগিয়ে এসে আমাকেসহ ছাত্রলীগের অন্য নেতাদের জড়িয়ে ধরলেন। তখন তাঁকে জানানো হলো, আওয়ামী লীগ নেতারা ছাত্রলীগকে হলে ঢুকতে দেয়নি। শেখ মুজিব তখন সবার সামনেই বললেন, ‘আরে আওয়ামী লীগ বাদ দে, তোরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই আমার আসল শক্তি।’ নেতার এই বক্তব্য সেদিন উজ্জীবিত করেছিল আমাদের, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। তারপর আর ঠেকায় কে। ’৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষিত হলো। ছাত্রলীগ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ল।” 

সাবেক রাষ্ট্রপতি জানান, ১৯৬৭ সালের প্রথম দিকে সিলেটে গিয়ে গ্রেপ্তার হন শেখ মুজিবুর রহমান। কিশোরগঞ্জ ছাত্রলীগ খবর পেল, পুলিশ তাঁকে বাহাদুরাবাদ মেইল ট্রেনে করে সিলেট থেকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাবে। এ খবরে চার-পাঁচ হাজার ছাত্র জড়ো হয়ে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন অবরুদ্ধ করে ফেলে। রাত ১২টায় ট্রেন এলো। ছাত্রলীগের দাবি, মুজিব ভাইকে না দেখে, তাঁর বক্তৃতা না শুনে ট্রেন যেতে দেওয়া হবে না। তাঁকে রাখা হয়েছিল ফার্স্ট ক্লাসের এক কামরায়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সেখানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এগিয়ে গেল। ‘হামিদ’ বলেই তিনি সবাইকে জড়িয়ে ধরলেন। একটি হ্যান্ড মাইকেরও ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল। সেই মাইক হাতে ট্রেনের বগির দরজায় দাঁড়িয়ে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বাঙালির নেতা শেখ মুজিবুর রহমান টানা ১০-১২ মিনিট বক্তৃতা করলেন। সবশেষে স্থানীয় নেতাদের পিঠ চাপড়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আন্দোলন চালিয়ে যা, জয় আমাদের হবেই।’

বললেন, ‘সাংগঠনিক কাজের সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়াও কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে।’ এভাবে কিশোরগঞ্জ ধরে রেখেছে বঙ্গবন্ধুর নানা স্মৃতি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা