রেজাউল করিম, গাজীপুর
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪ ১০:৩২ এএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪ ১০:৪১ এএম
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় সড়কদ্বীপের মাঝে নির্মিত ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ ভাস্কর্যটি চলমান বিআরটি প্রকল্পের কারণে আড়ালে পড়ে গেছে। প্রবা ফটো
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়দেবপুর (পরে গাজীপুর) সেনানিবাসের ভাওয়াল রাজবাড়িতে ছিল পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কার্যালয়। সেখানে ২৫-৩০ জন ছাড়া সবাই ছিলেন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা বাঙালি দমনের নীলনকশা অনুযায়ী ১৫ মার্চের মধ্যে রাইফেল জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বাঙালি সেনারা রাজি না হলে ১৯ মার্চ সকালে ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিতে জয়দেবপুর সেনানিবাসে আসেন। এ খবর জানাজানি হলে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় জনতা লাঠি, তীর-ধনুক ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জয়দেবপুর বটতলায় জড়ো হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ওই যুদ্ধে মনু খলিফা, ফুটবলার হুরমত আলী, কানু মিয়া ও কিশোর নিয়ামত শহীদ হন। জয়দেবপুরে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে এই সম্মুখ যুদ্ধের পর সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সারা দেশে স্লোগান ওঠে, ‘জয়দেবপুরের পথ ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’।
ওই প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং শহীদদের স্মরণে ১৯৭৩ সালে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা সড়কদ্বীপের মাঝে নির্মাণ করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেশের প্রথম ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। আজ মঙ্গলবার সেই গৌরবান্বিত দিন, সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস। এমন একটি দিন উপলক্ষে জাগ্রত চৌরঙ্গী বিশেষ মর্যাদার দাবিদার হলেও হয়েছে উল্টোটা। চলমান বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কারণে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই ভাস্কর্যটি চলে যাচ্ছে দৃষ্টির আড়ালে। এরই মধ্যে জাগ্রত চৌরঙ্গীর সীমানাপ্রাচীর অপসারণ করা হয়েছে। নির্মাণসামগ্রী স্তুপ করে রাখা হয়েছে ভাস্কর্যের বেদিতে। ধুলোবালি আর নির্মাণসামগ্রীতে চরম অযত্নে রয়েছে ভাস্কর্যটি। এমন অবস্থায় ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য বর্ধন কিংবা স্থানান্তরের বিষয়ও কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ১৯ মার্চ গাজীপুরে সংঘটিত প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামের চেতনায় নির্মিত জাগ্রত চৌরঙ্গী নির্মাণ করেন ভাস্কর আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৭৩ সালে নির্মিত এই ভাস্কর্যটির বেদিসহ উচ্চতা ৪২ ফুট ২ ইঞ্চি। ২৪ ফুট ৫ ইঞ্চি বেদির ওপর মূল ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১৭ ফুট ৯ ইঞ্চি। উদোম গায়ে ভাঁজ করে লুঙ্গী পরা টগবগে পেশিবহুল এক যুবক মাথা উঁচু করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। তার ডান হাতে তাজা গ্রেনেড আর বাম হাতে রাইফেল। উঁচু এই ভাস্কর্যটি অনেক দূর থেকে চোখে পড়ে। এটি দেখে এই প্রজন্মের বুক ভরে আসে বিজয়ের অহংকারে। তবে এমন একটি ভাস্কর্য আজ অস্তিত্ব সংকটে।
মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধের নেতা ও অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস সাত্তার মিয়া বলেন, ১৯ মার্চ গাজীপুরের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। ঐতিহাসিক এদিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে অন্তত ওইদিন মারা যাওয়া শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। পাশাপাশি জাগ্রত চৌরঙ্গী ভাস্কর্যটি যেন কোনো স্থাপনার কারণে নষ্ট না হয়, এদিকে আমাদের নজর দিতে হবে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বিআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পের বাজেট দিয়েই ভাস্কর্যটির বেদি উঁচু করে আরও সুন্দর করে দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, এদিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন, ১৯ মার্চ উদযাপন কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং শহীদ হুরমত স্মৃতি সংসদ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।