বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪ ১৯:০৪ পিএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪ ১৯:১২ পিএম
করতোয়া নদী পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। প্রবা ফটো
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘করতোয়া নদীর সীমানার মধ্যে যারাই থাকবে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। সীমানা চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নদীর পুনঃখননের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা এই সীমানার মধ্যে যাদেরকে পাব, তাদেরকে উচ্ছেদ করব। এক্ষেত্রে এই উচ্ছেদ একটি চলমান প্রক্রিয়া।’
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকালে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় করতোয়া নদী পুনঃখনন ও ডানতীরে স্লোপ প্রটেকশন কাজ শীর্ষক প্রকল্পের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কাজের উদ্বোধনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
জেলা প্রশাসক সাইফুল বলেন, ‘স্মার্ট বগুড়া গড়ার অংশ হিসেবেই করতোয়া নদী খননসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়াও করতোয়ার পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণ করে শহরের যানজট নিরসনের চেষ্টা চলছে। নদীর নাবত্যসহ সৌন্দর্য বর্ধনে যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হলে স্মার্ট বগুড়ায় পরিণত হবে।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) বগুড়া জেলা কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন, সিভিল সার্জন ডা মোহাম্মদ শফিউল আজম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)নিলুফা ইয়াসমিন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভীন।
এসময় স্থানীয় সরকার বিভাগ বগুড়ার উপ-পরিচালক মাসুম আলী বেগ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মেজবাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম, বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহমুদুল আলম নয়ন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান, প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আবদুস সালাম বাবু, ব্যবসায়ী নেতা পরিমল প্রসাদ রাজসহ সরকারী প্রতিষ্ঠান প্রধান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এবার করতোয়া নদীর নাব্যতা ফেরাতে প্রায় ৪৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৭ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। ১ম ধাপে ১৩ মার্চ বগুড়ার শাজাহানপুর অংশে খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। পরের দিন ১৪ মার্চ ২য় ধাপে মাটিডালী এলাকায় এবং ৩য় দফায় ১৯ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে খনন কাজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘করতোয়া নদী উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় পাউবো। প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে বগুড়ার শিবগঞ্জ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এবং তারপর শিবগঞ্জ থেকে দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা পর্যন্ত মোট ১০৭ কিলোমিটার অংশ পুনঃখননের কথা বলা হয়। পাশাপাশি ইছামতী নদীর ৭২ কিলোমিটার ও গজারিয়া নদীর আরও ৩৪ কিলোমিটার অংশ পুনঃখননের প্রস্তাব করা হয়। ২ হাজার ৯৪২ কোটি টাকার ওই প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অনুমোদনই মেলেনি।
পাউবো সূত্র বলছে, প্রকল্পটি ব্যয়বহুল হওয়ায় তার অনুমোদন প্রক্রিয়া ঝুলে যায়। প্রায় দুই বছরেও বড় ওই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ২০২৩ সালের শুরুতে পাউবোর পক্ষ থেকে করতোয়া নদীর বগুড়া শহরের ১৭ কিলোমিটার অংশ এবং পাশের সুবিল খাল ও অটো খালের ২৭ কিলোমিটার অংশসহ মোট ৪৪ কিলোমিটার পুনঃখননের প্রকল্প নেওয়া হয়। ব্যয় ৪৭ কোটি টাকা হওয়ায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে হয়নি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে সেটি অনুমোদন পেয়ে যায়। এরপর টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়। মূলত সেই প্রকল্পেরই কাজ শুরু হলো।
পাউবো বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, মাত্র ১৭ কিলোমিটার অংশ খনন করে পুরো নদীর নাব্য ফেরানো সম্ভব নয়। যেহেতু মূল প্রকল্পটি অনুমোদনে বিলম্ব হচ্ছে সে কারণে ছোট আকারে কাজ শুরু করেছি। আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। আশা করছি এ কাজ শেষ হওয়ার আগেই মূল প্রকল্পটির অনুমোদন হয়ে যাবে। তখন ১৭ কিলোমিটার অংশ বাদ দিয়ে কাজ করা হবে।