রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ১৩:৪৬ পিএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪ ১৩:৫১ পিএম
সন্তানকে ফিরে পেয়ে খুশি বাবা হালিম। প্রবা ফটো
প্রায় এক বছর আগে ২৭ রমজানের রাতে হারিয়ে যায় ২২ বছরের যুবক মো. মনজুরুল হক। মনজুরুলের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউরা উপজেলার হাজংপাড়া গ্রামে। বাবা মো. হালিম উদ্দিন পেশায় একজন কৃষক। মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তান মনজুরুলকে খুঁজতে দেন দরবার শুরু করেন বাবা। দ্বারস্থ হন একাধিক কবিরাজের। এভাবে পকেটের টাকা খরচা হতে থাকলেও কোনোভাবেই মিল ছিল না সন্তানের সন্ধান।
এভাবে পার হতে থাকে মাসের পর মাস। এক বুক যন্ত্রণা আর চিন্তার ভাঁজ কপালে নিয়ে ছেলের আশা প্রায় ছেড়েই দিতে বসেছিলেন হালিম উদ্দিন। এর মাঝেই প্রায় ২০ দিন আগে হালিম উদ্দিনের এক ভাতিজা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে পান মনজুরুলের ছবি। ভারতের কোনো এক গ্রামে তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
এরপর এলাকাবাসী হালিম উদ্দিনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে তিনি রাজশাহীর-১ এর বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। বিষয়টিকে মানবিকভাবে নিয়ে বিজিবি-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর ইসলাম বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হারানো মনজুরুল হকের ছবিসহ পুরো তথ্য বিএসএফের কাছে সরবরাহ করা হয় ১৫ মার্চ।
এরপর মনজুরুল হককে ভারতের মুর্শিদাবাদের একটি গ্রাম থেকে খুঁজে বের করে বিএসএফ। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহীর চরমাজারদিয়া বিওপির সীমান্ত পিলার ১৬৫/৪-এস এর কাছে চরমাজারদিয়া বিওপি কমান্ডার এবং ৭৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাহারপাড়া ক্যাম্প কমান্ডারের মধ্যে পতাকের আয়োজন করা হয়। সেখানে নিখোঁজ মো. মনজুরুল হককে বিজিবির নিকট হস্তান্তর করে বিএসএফ।
এদিকে বিষয়টি জানিয়ে ডেকে আনা হয় বাবা মো. হালিম উদ্দিনকে। তিনি ময়মনসিংহ থেকে ছুটে আসেন রাজশাহীতে। রাতেই রাজশাহী নগরীতে অবস্থিত বিজিবি সেক্টর অফিসে আবেগ ঘন পরিবেশে বাবার হাতে সন্তানকে তুলে দেয় বিজিবি।
আদরের সন্তানকে বুকে ফিরে পেয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে বাবা হালিম বলেন, ‘আমি বিজিবিকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমার এই মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। আরেক ছেলে অটোচালক। আমি কৃষি কাজ করি। আমরা ছেলে কীভাবে ভারতে গেল তা বুঝতে পারছি না। তবে ধারণা করছি ধোবাউরা সীমান্ত দিয়ে কোনোভাবে হয়তো সে ভারতে চলে যায়। ওই দিকে ভারতে আসাম ও মেঘালয় অঞ্চল। ওই অঞ্চল পেরিয়ে মুর্শিদাবাদের গ্রামে কীভাবে আসল তাও অজানা। তবে শেষ পর্যন্ত আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেয়েছি এটাই আমার পরম পাওয়া।
রাজশাহীর বিজিবি-১ এর অধিনায়ক কর্নেল মতিউর ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বিবেচনায় বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদেরকে এ বিষয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানাই। তারাও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ৪ দিনের মধ্যে ওই যুবককে চিহ্নিত করে এবং পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর ওই রাতেই আমরা যুবককে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করি। এই বিষয়টি বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যকার আন্তরিকতা ও সুসম্পর্কের অন্যতন উদাহরণ হয়ে থাকবে।’