চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ১৬:১৬ পিএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪ ১৬:১৯ পিএম
চট্টগ্রাম মেডিকেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অভিযান চালিয়ে ৩৮ জন দালালকে আটক করা হয়। প্রবা ফটো
চট্টগ্রাম মেডিকেলে বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৩৮ জন দালালকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমান আদালত তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন।
বুধবার (২০ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এই অভিযান পরিচালনা করে র্যাব।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড, বাকি ২৪ জনকে ১ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তারা মূলত গ্রামের দরিদ্র, অসহায়, যারা সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে অনভিজ্ঞ এমন ভুক্তভোগীদের টার্গেট করে এবং সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অপ্রতুলতার কথা বর্ণনা সাপেক্ষে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে এক ধরণের ভীতি সৃষ্টি করে বিভিন্নভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
আটক দালালদের মধ্যে ছয় ধরনের চক্রের কথা জানায় র্যাব। এর মধ্যে জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল এলাকায় গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকপক্ষ এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকদের নিয়ে এক ধরনের দালাল চক্র তৈরি হয়ে থাকে। প্রায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই দালাল চক্রের প্রভাব লক্ষণীয়। দালালরা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কথা বর্ণনা দিয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থার সংকট তৈরি করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে নিয়ে যায়।
শয্যা ও ওয়ার্ড সিন্ডিকেট নামে আরেকটি চক্র আছে যার সদস্যরা প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আগত সাধারণ রোগীদের জরুরি মুহূর্তে বহনের ট্রলি থেকে শুরু করে শয্যা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে থাকে।
দুরারোগ্য রোগের ভীতি সঞ্চার করতেও এক ধরণের চক্র সক্রিয় থাকে জানিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগী আসা মাত্রই তাকে মরণ ব্যাধি ক্যান্সার বা টিউমার বা অন্যকোনো বড় ধরনের রোগের কথা বলে বেসরকারি কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভর্তি করায়। ফলে রোগীরা সরকারি হাসপাতালের বিনামূল্যের চিকিৎসা ও স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। এতে অধিক অর্থ ব্যয় করে রোগী ও তার স্বজনরা সর্বশান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। দালালদের প্রলোভনে পরে মানহীন হাসপাতালে যাওয়ায় অনেক সময় সু-চিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনায় সক্রিয় সিন্ডিকেটের বিষয়ে র্যাব জানায়, হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তার অপ্রতুলতার গুজব ছড়িয়ে সিন্ডিকেটকারীরা ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স অধিক টাকায় ভাড়া দেয়। এমনকি চিকিৎসাধীন কোনো রোগী এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করার প্রাক্কালে এবং কোনো রোগী মৃত্যুবরণ করলেও হাসপাতাল থেকে তার লাশ বহনেও সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দালালচক্রের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ওষুধ ক্রয় বিক্রয়েও রোগীদের বিভ্রান্ত করতে আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আটক দালালদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, একজন রোগী সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে আসতে পারলে দালালরা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং পরিস্থিতিভেদে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকে।