মনোয়ার হোসেন রুবেল, ধামরাই (ঢাকা)
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪ ১০:৩০ এএম
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৪ ১০:৪১ এএম
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের অনেক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে, তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। ফলে যানবাহনকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। ধামরাই এলাকা থেকে তোলা প্রবা ফটো
পেশাগত কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন মো. আরিফুল ইসলাম। সড়কের গর্তে পড়ে ছিটকে যায় তার বাইক। গুরুতর আহত হন আরিফুল। হাত ভেঙে কর্মহীন থাকতে হয় প্রায় এক মাস। তিনি বলেন, সড়ক ফাঁকা থাকায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি। প্রায় তিন মাস আগের সেই দুর্ঘটনার পর থেকে বাইক চালানো বাদ দিয়েছেন আরিফুল। খানাখন্দে ভরা সড়কে চলাচলে আতঙ্কের কথা জানান তিনি।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এমন দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ব্যস্ত সড়কে ছিটকে পড়ে চলাচলরত অন্য গাড়ির চাপায় মৃত্যুর ঘটনাও নিয়মিত। গত ১৯ মার্চ মহাসড়কের বারবাড়িয়া এলাকা থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার ঘুরে দেখা গেছে শতাধিক জায়গায় ছোটবড় গর্ত। সড়কে ফাটলও আছে অনেক জায়গায়। এর মধ্যে বাথুলি, শ্রীরামপুর, কালামপুর, ভায়াডুবি বিল, জয়পুরা এলাকা অন্যতম। হাইওয়ে পুলিশের তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২ মাসে ধামরাইয়ের কালামপুর থেকে মানিকগঞ্জের তরা ব্রিজ পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়কে ৩৯টি দুর্ঘটনায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের তথ্য বলছে, শুধু ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ইসলামপুর থেকে বারবাড়িয়া পর্যন্ত সড়কে ৯৫ দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু ও ১৪০ জন আহত হয়েছে। সংগঠনটির তথ্য মতে, মহাসড়কের খানাখন্দ, বেপরোয়া যানবাহন চলাচল, অবৈজ্ঞানিকভাবে সড়ক নির্মাণসহ নানা কারণে দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে।
সড়কের যান চালকরাও জানিয়েছেন ঝুঁকির কথা। সেলফি পরিবহন নামে একটি বাসের চালক শুক্কুর আলী বলেন, ‘গাড়ি প্রায়ই গর্তে পড়ে লাফ দিয়ে ওঠে। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়।’ একই কথা বলেন আন্তঃজেলা ট্রাকচালক বাদশা মিয়া, ‘লোড গাড়ি চালাতে হয় চাপ নিয়ে। গর্ত, ভাঙাচোরা ও উঁচু-নিচু সড়কে গাড়ি বড় ঝাঁকুনি দেয়। ভয়ে থাকি।’ নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ধামরাই উপজেলা কমিটির সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, মানিকগঞ্জে সাংবাদিক মিশুক মুনির ও তারেক মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় দেখা গেছে, সড়ক যথাযথভাবে নির্মাণ না হওয়াই ছিল দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই এলাকায় প্রচুর খানাখন্দ। ফলে যানবাহনকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুখেন্দু বসু বলেন, ‘আমরা নিয়মিত সড়ক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। আমি সওজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। মহাসড়কের যেসব জায়গায় খানাখন্দ আছে, ঈদের আগেই তারা সব ঠিক করে দেবে।’
সওজের নয়ারহাট কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ‘এখানে কাজটি করতে বড় ধরনের প্রোগ্রাম নেওয়া লাগবে। কিছু জায়গায় কাজ করা হয়েছে। আর কিছু গ্যাপে কাজ করা হয়নি বিগত অনেক বছর। আমরা কাজের প্রস্তাবনা দিয়েছি। একটু সময় লাগবে। আপাতত আগামী বছরের জন্য খানাখন্দগুলো ঠিক করে দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আসলে কাজটি করতে অনেক টাকা দরকার। এজন্য প্রস্তাব দিয়েছি। প্রস্তাব পাস না হলে সড়কে যেসব জায়গায় সমস্যা আছে সেগুলো ঠিক করা কঠিন।’