কাজল বরণ দাস, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৩ পিএম
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪ ১৭:০৯ পিএম
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত
শিগগিরই উৎপাদনে আসছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পায়রায় নির্মাণাধীন আরও দুটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর একটি আগামী জুন থেকে জাতীয় গ্রিডে নতুন করে যুক্ত করবে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। পায়রা বন্দরের পাশেই নির্মাণাধীন আরএনপিএল নামের পাওয়ার প্লান্টটি উৎপাদনে গেলে এবার গরমে লোডশেডিং অনেকটা কমে আসবে।
এদিকে পায়রা বিসিপিসিএল কেন্দ্রের অভ্যন্তরেই ১৩২০ মেগাওয়াটের আরও একটি দ্বিতীয় ফেজের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ শুরু হয়েছে। পটুয়াখালীতে নবনির্মিত দুটিসহ তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত ৩ হাজার ৯৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থেকে দেশের কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুতের চাহিদার সিংহভাগই পূরণ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে লোডশেডিং কমে আসবে অনেকাংশেই।
সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদনে থাকা পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে নির্মাণাধীন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) এখন দৃশ্যমান। ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরএনপিএল) যৌথ বিনিয়োগে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামে ৫০০ একর জমিতে ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে টারবাইনের শতভাগ এবং চুল্লির ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বয়লারের স্টিল স্ট্রাকচারের কাজও শেষ। এ ছাড়া কনস্ট্রাকশনের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে।
পটুয়াখালী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ওসমান (মেকানিক্যাল) জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ব্যবহার করা হচ্ছে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি। ২২০ মিটার উঁচু চিমনি দিয়ে কয়েক ধাপে ফিল্টারিং হয়ে বের হবে ধোঁয়া। তাই বাতাসের সঙ্গে মিশে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। এ ছাড়া সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে পরিবেশসম্মতভাবে কয়লা খালাস এবং তা প্রক্রিয়াজাত করা হবে। ঠিক সময় পাওয়ার প্লান্টটি উৎপাদনে নিতে ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। চীনা প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে তিন শিফটে দিন-রাত কাজ করছেন প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক ও প্রকৌশলী। কেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ ভাগ পূরণ হবে। এতে গরমের সময় লোডশেডিং কমবে শতভাগ।
আরএনপিএল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আশ্রাফ উদ্দিন বলেন, করোনাকালীন নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। তারপরও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে শ্রমিকরা দিন-রাত কাজ করছেন। ইতোমধ্যে ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি চলতি বছরের জুনে এই কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে। কেন্দ্রটির টেস্টিং এবং কমিশনিং অপারেশন শুরু হয়েছে। আগামী মে মাসে শুরু হবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন। সবকিছু ঠিক থাকলে জুনেই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন এ পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদিত বিদ্যুৎ। প্রথমে যুক্ত হবে প্রথম ফেজের ৬৬০ মেগাওয়াট এবং এর কিছুদিন পর দ্বিতীয় ফেজের বাকি ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে ২০১৬ সালে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের অদূরে নির্মিত হয় ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এ কেন্দ্রের পাশেই রয়েছে দেশের বৃহৎ আরেকটি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যেখান থেকে গত তিন বছর ধরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অপারেশন) শাহ আব্দুল হাসিব বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ডলার সংকটের কারণে অনেক সময় এলসি খুলতে বিলম্ব হয়। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় কয়লাবাহী জাহাজগুলো ধারাবাহিকভাবে জেটিতে আসছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।
পায়রা বন্দরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রেজওয়ান ইকবাল খান বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ফেজ চালু হলে বন্দরে কয়লার জাহাজের চাপ বাড়বে। তাই ইতোমধ্যে জেটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সম্প্রসারণ করা জেটিতে বসানোর জন্য চীন থেকে মাদার ভ্যাসেলে করে আনা হয়েছে একটি বিশাল শিপ আনলোডার। এ আনলোডার দিয়ে জাহাজ থেকে কয়লা খালাসসহ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আনা অন্যান্য সরঞ্জাম আনলোড করা হবে।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্লান্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার শাহ আব্দুল মাওলা বলেন, পায়রায় পর্যাপ্ত কয়লা মজুদ রয়েছে। শুধু বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রিলব্ধ বিদ্যুতের বকেয়া আদায় বা পরিশোধ সময়োপযোগী করে নিশ্চিত করতে পারলে আর কয়লার সংকট দেখা দেবে না। এই মুহূর্তে দেশে চাহিদার ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে বিসিপিসিএল থেকে। আর নির্মাণাধীন নতুন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আগামী তিন বছরের মধ্যে উৎপাদনে গেলে দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার ২০ ভাগই পূরণ হবে এখান থেকে।