× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যমুনার বুকে দৃশ্যমান বঙ্গবন্ধু রেলসেতু

রাজু আহমেদ, রাজশাহী

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ১২:২৪ পিএম

দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প দীর্ঘতম রেলওয়ে সেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প দীর্ঘতম রেলওয়ে সেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

যমুনার বুকে এখন দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প দীর্ঘতম রেলওয়ে সেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুটির দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। যার মধ্যে ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। সেতুটি চালু হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থায় আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্রান্সএশিয়ান রেলপথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বেগবান হবে দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি। 

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর এ সেতুটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে জাইকা। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ প্রান্তে দুইটি প্যাকেজের আওতায় দুর্বার গতিতে চলছে এই প্রকল্পের কাজ।

দীর্ঘতম ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের সেতু

বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। অর্থাৎ এই সেতুর ওপর দিয়ে দুইটি ট্রেন একত্রে যাতায়াত করতে পারবে। সেই সঙ্গে চলাচল করতে পারবে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ ট্রেন। ৭ হাজারের মতো দেশি ও বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকের একাগ্র পরিশ্রমে দ্রুত এগিয়ে চলেছে রেলসেতুর

নির্মাণকাজ। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ অংশে দুইটি প্যাকেজের আওতায় এই রেলসেতুতে নির্মাণ হচ্ছে ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যান। ইতোমধ্যে ৪৯টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। পিলারের ওপর বসানো হয়েছে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা ৩৭টি স্টিলের স্প্যান।

রেলসেতুটিতে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ দুই ধরনের ট্রেনই ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে। সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ তৈরি করতে দুই প্রান্তে ভায়া ডাক ও ৩০ কিলোমিটার ডাবল লাইনের রেলপথের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। সেতুর স্প্যানে বসানো হচ্ছে স্লিপারবিহীন রেললাইন। দেশের রেললাইনে জাপানি এই প্রযুক্তির ব্যবহার এটাই প্রথম। এই প্রযুক্তিতে স্টিল স্ট্রাকচারের গার্ডারের সঙ্গে রেললাইনের সংযোগ প্রযুক্তিতে থাকবে না কোনো স্লিপার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানবিরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুর পিলারগুলোর ফাউন্ডেশন দেওয়া হয়েছে জাপানি এসপিএসপি ফাউন্ডেশন পদ্ধতিতে। আগামী মে মাসের মধ্যে পুরো স্প্যান বসানো সম্ভব হবে। কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ।’ 

পণ্য পরিবহনে বাড়বে সক্ষমতা

রেলের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে পণ্য পরিবহনে নিজেদের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে এই সেতুর মাধ্যমে। সেতুটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগে যেমন গতি বাড়বে, তেমনি তৈরি হবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে রেলে পণ্য পরিবহনে সক্ষমতা। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি রেল চলাচল করতে পারে; বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মিত হলে প্রতিদিন ৬৮টি রেল চলাচল করতে পারবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে নীলফামারীর চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও চলছে। ভারতের ফুলবাড়ী অংশে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করছে সেখানকার রেল বিভাগ।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম অসীম কুমার তালুকদার জানান, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের গতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার। এ ছাড়া সেতুর ওপর দিয়ে একই সময়ে একটির বেশি ট্রেন চলাচল করত না। নতুন রেলসেতুটি চালু হলে একদিকে যেমন ট্রেনে গতি ফিরবে তেমনি যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের নতুন দ্বার উম্মোচিত হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু জানান, সেতুটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্প খরচে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দিতে পারবে। যাত্রীসেবার মানও বাড়বে। উত্তরাঞ্চলে নানা ধরনের শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে বা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। উৎপাদিত শিল্পপণ্য ও কৃষিপণ্যের বিকাশে রেলসেতু এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। 

তবে ব্যবসায়ীদের এই নেতা জানান, ‘আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী স্টেশন পর্যন্ত রেললাইন সংস্কার ও ডাবল লাইন না করা গেলে এই রেলসেতু পুরোপুরি কাজে আসবে না। তা ছাড়া ট্রেনে লাগেজ বগিও যুক্ত করতে হবে। স্টেশনগুলোতে পণ্য পরিবহনে বিশেষ করে কাঁচামাল পরিবহনের উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। রাজশাহীতে উৎপাদিত আম, সবজি ও মাছের মতো কাঁচামালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা শিল্প কলকারখানার জন্য কাঁচামাল রেলযোগে সরাসরি রাজশাহীতে তথা উত্তরবঙ্গে আনার সুব্যবস্থাও করতে হবে। তবেই এই রেলসেতুর সুফল ভোগ করবে পুরো দেশবাসী।’ 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ট্রেন চলাচলের উপযোগী হবে। এটি রেলের জন্য যুগান্তকারী প্রকল্প। সেতুর ওপর দিয়ে ১২০ কিলোমিটার বেগে একত্রে চলচল করতে পারবে দুটি ট্রেন। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা