× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে রূপগঞ্জে গ্রামবাসীর ওপর শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশা বাহিনীর হামলা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ২১:১৫ পিএম

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪ ২৩:৫৩ পিএম

রূপগঞ্জের নাওড়া গ্রামে আবারও নিরীহ বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালিয়েছে অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাররফ হোসেন মোশা ও তার বাহিনী। ছবি : সংগৃহীত

রূপগঞ্জের নাওড়া গ্রামে আবারও নিরীহ বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালিয়েছে অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাররফ হোসেন মোশা ও তার বাহিনী। ছবি : সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নাওড়া গ্রামে আবারও নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালিয়েছে ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। হত্যা, ধর্ষণ, মাদকসহ অন্তত ৫০ মামলার আসামি অবৈধ অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাররফ হোসেন মোশা ও তার বাহিনী এই হামলা চালায়। ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবাহান আনভীরের নির্দেশেই হামলা চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় গ্রামবাসী জানায়, মোশার নেতৃত্বে অবৈধ অস্ত্রধারী বাহিনী দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি মোশার লোকজন ফেসবুকে নাওড়া এলাকার নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালানোর ঘোষণা দেয়।

সোমবার (২৫ মার্চ) ভোর ৬টার দিকে মোশার নেতৃত্বে তার সশস্ত্র ক্যাডার নিরব, স্বাধীন, সাখাওয়াত উল্লাহ, আব্বাস, নাজমুল, রুবেল, আনোয়ার, জয়নাল, তাজেল, রিফাত, রায়হান, আলহাদি, জাগু, ভুট্টু, চোরা দুলাল, আব্দুল, আরমানসহ ৪০ থেকে ৫০ জন সদস্য পিস্তল, টেঁটা, বল্লম, রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, সামুরাইসহ নানা ধরনের দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে নাওড়ায় নিরীহ মানুষের ওপর হামলা করে। এতে ইয়ামিন, লিখন, নাঈম, শাকিল, আলালসহ ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। আত্মরক্ষায় হামলাকারীদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে গ্রামবাসী। পরে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে কয়েক প্লাটুন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নিরীহ গ্রামবাসী জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশা মাদক, হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অবৈধ দখল বাণিজ্যসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে কিছু দিন পরপরই স্থানীয়দের ওপর হামলা করছে। এর আগে ৩ মার্চ তারা গ্রামবাসীর ওপর হামলা করেছিল। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই তারা একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে। তবুও এসব বিষয়ে যেন দেখার নেই কেউ। পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ছত্রছায়ায় থাকায় আদালত থেকে জামিনে বেরিয়েই ফের অবৈধ দখল, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তাদের কাজে বাধা দিলেই গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালানো হয়। শুধু হামলা করেই ক্ষান্ত হয় না; তারা মামলা দিয়ে গ্রামের কৃষকদের হয়রানি করছে। মোশা বাহিনী ও তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিকার চায় স্থানীয়রা।

স্থানীয় নজির হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে কায়েতপাড়া, দাউদপুর, কাঞ্চনসহ রূপগঞ্জের পাঁচটি ইউনিয়নের হাজার হাজার একর জমির ওপর কুনজর পড়ে ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের। বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর গ্রামবাসীকে কখনও ভয়ভীতি দেখিয়ে কখনও-বা জোরপূর্বক তাদের বসতভিটা ও কৃষিজমি থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে। এই দখলবাজিতে নিয়োগ করেছে রূপগঞ্জের কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোশাকে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতরে অবস্থান নিয়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিশাল দল ও অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছে সে। সম্প্রতি মোশা বাহিনীর সদস্যরা ফেসবুকে ঘোষণা দেয় যে, ‘চলতি ১৫ রমজানের মধ্যে নাওড়া গ্রামে হামলা চালাবে এবং দখল করে নেবে।’ ওই ঘোষণা অনুযায়ী সকালে দেশি-বিদেশি অস্ত্র, শর্টগান, টেঁটা, বল্লম নিয়ে গ্রামবাসীর ওপর হামলা করে। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে চারদিক প্রকম্পিত হয়। মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীরা গ্রামবাসীর বাড়িঘরে ভাঙচুর করে ব্যাপক হারে লুটপাট চালায়।

হামলায় বিস্মিত গ্রামবাসী প্রতিরোধ গড়ে তুললে সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলি, ছোড়া টেঁটায় আহত হয় কমপক্ষে ২০ জন। তাদের মধ্যে ইয়ামিন, লিখন, নাঈম, শাকিল ও আলালকে ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

গুলিবিদ্ধ আলাল মিয়া বলেন, ‘মোশা বাহিনীর লোকজন আমার পায়ে গুলি করেছে। তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে গ্রামের অনেকেই আহত হয়েছে।’ গ্রামের নিরাপত্তায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসী মোশার ভয়াল থাবা থেকে পরিত্রাণ চাই।’ 

নাওড়া গ্রামের জাহিদ হাসান বলেন, ‘মোশার লোকজন ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে জানায়, যারা বসুন্ধরাকে জমি দেবে না, তাদের এলাকাছাড়া করবে। তারা এ জাতীয় ঘোষণা বিভিন্ন জনের হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারের ইনবক্সেও দেয়। তারা পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ভোরে হামলা করে। এ সময় অনেকেই সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে ছিল। মোশা বাহিনীর অতর্কিত হামলায় অনেকেই আহত হয়েছে।’

এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে, দেশের শীর্ষস্থানীয় ভূমিদস্যু আনভীর চাইছে যেকোনো মূল্যে রূপগঞ্জের পাঁচটি ইউনিয়নে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে। আর এ কারণে কয়েক দিন পরপরেই সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা চালিয়ে এলাকায় একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

গ্রামবাসীরা জানায়, ভূমিদস্যু দানব বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে মোশা। রাতারাতি লোকজনের কৃষিজমি দখল করে সেখানে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। লাল দেয়াল তুলে দিয়ে সাইনবোর্ডে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা হয়। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘হামলার খবর পেয়ে রূপগঞ্জে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়। হামলার বিষয়ে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কে এই মোশা 

রূপগঞ্জের আতঙ্ক তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ওরফে মোশা। হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ধর্ষণ, পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র মামলা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ৪৮টি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১ জুন ভারতে পালানোর সময় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। মাত্র আড়াই মাসের মাথায় গত বছরের ২১ আগস্ট জামিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পায় মোশা। কিছু দিন ‘আত্মগোপনে’ থেকে মাফিয়া গডফাদারের ছত্রছায়ায় আবারও সে দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে আসে। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় এলাকায় শুরু করে মহড়া। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে বিশাল গাড়িবহর ও অবৈধ অস্ত্রধারী বডিগার্ড নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় পুরো রূপগঞ্জ। এর বাইরেও মোশার রয়েছে বিশাল টেঁটা বাহিনী ও হাতুড়ি বাহিনী। কেউ তার কথার বাইরে গেলেই তাকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

মোশার বডিগার্ডের সংখ্যা কত, তার হিসাব নেই। রূপগঞ্জ থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপপরিদর্শক জানান, মোশার সঙ্গে সব সময় অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা কথিত বডিগার্ড হিসেবে ঘুরে বেড়ায়। প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী মোশার দলের সদস্যসংখ্যা ৭০ থেকে ৮০। এই সন্ত্রাসীরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, ছিনতাই, মাদক কারবারসহ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তারা ভয়ভীতি দেখায়। এলাকার মানুষ মোশা বাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মোশা রূপগঞ্জের নাওড়া গ্রামের মোতালেব ভূঁইয়ার ছেলে। আপন বড় ভাইকে খুনের মধ্য দিয়ে অন্ধকার জগতে পা রাখা সে। 

মোশার বিরুদ্ধে ১ জুন রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন এসআই আমিনুর রহমান। মামলায় সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়। এজাহারে মোশা ও তার বাহিনীর ২৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়।

ওই দিনই স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মোশাসহ তার বাহিনীর ৩৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৬০-৭০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। বাদীর অভিযোগ- পিস্তল, ককটেল, লোহার রড, চাপাতি, রামদা নিয়ে গ্রামবাসীকে ঘেরাও করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে মোশা বাহিনীর সদস্যরা। চাঁদার টাকা না পেয়ে তারা গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালায়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা