জাকির হোসেন, বুড়িচং (কুমিল্লা)
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১৫:০২ পিএম
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৯ পিএম
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয় অবাধে গোমতীর চরাঞ্চল থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে ভূমিখেকোরা। এতে চাষাবাদশূন্য হয়ে পড়েছে গোমতীর চরাঞ্চল। প্রবা ফটো
কুমিল্লার প্রধান নদী গোমতী। এই নদীর দুই তীরের চরাঞ্চলকে বলা হয় জেলার শস্যভাণ্ডার। প্রতি বছর উজান থেকে আসা পলিতে উর্বর হয় গোমতীর চর। আর সেই চরে বছরব্যাপী ফসল ফলানোর স্বপ্ন দেখত কৃষক। সাম্প্রতি ভূমিখেকোরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবাধে গোমতীর চরাঞ্চল থেকে মাটি কেটে বিক্রি করায় চাষাবাদ শূন্য হয়ে পড়েছে গোমতীর চরাঞ্চল। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিরক্ষা বাঁধ। বায়ু ও শব্দদূষণে নদীপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে।
ভারতের ত্রিপুরা থেকে উৎপন্ন গোমতী নদী কুমিল্লার কটকবাজার সীমান্ত দিয়ে কুমিল্লায় প্রবেশ করে সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস হয়ে দাউদকান্দির সাপটায় মেঘনায় মিলিত হয়েছে। নদীর দুই তীরে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। প্রতি বছর উজান থেকে আসা পলিতে নদীর চরাঞ্চল উর্বর করে। আর সেই চরে সারা বছর চাষাবাদ করে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষক। এই চরে ধান, পাট, গম, সরিষা, শীতকালীন বিভিন্ন শাকসবজিসহ আখ, বারোমাসি মুলা উৎপাদন হয়।
কিন্তু সাম্প্রতি একটি প্রভাবশালী মহল রাতের আঁধারে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে ডাম্পট্রাকে নিয়ে যাচ্ছে বিক্রির জন্য। এতে কৃষকরা প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলাসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি ভারী ডাম্পট্রাকের চলাচলে গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধও বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকদের স্বার্থে প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষায় কুমিল্লা জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসন গোমতীর চরাঞ্চল থেকে মাটি কাটা ও নদী থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে মাটিখেকোরা দিনে মাটি কাটা বন্ধ রাখলেও সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত মাটি কাটা অব্যাহত রাখছে।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর (উত্তর) ইউনিয়নের আমতলী এলাকার আলমগীর, ইয়াকুব, মিজান, রিপন, মোস্তফা, মনির, বায়েজিদ, হালিম, মাসুদ, বুড়িচংয়ের ময়নামতি ইউনিয়নের বাগিলারা এলাকায় আমির হোসেন, তপনসহ কয়েকজনের একটি সিন্ডিকেট মাটিকাটার নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ ছাড়াও ষোলনল ইউনিয়নের মিথিলাপুর এলাকায় সাবেক ইউপি সদস্য এরশাদ মেম্বারের নেতৃত্বে একই উপজেলার কাহেতরা অংশে সুমনসহ সদর উপজেলার আলেখারচর, পালপাড়া, বুড়িচংয়ের মীরপুর, গোবিন্দপুর অংশে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাটি কাটা চক্র রাতের আঁধারে বাঁধে মাটি কাটা অব্যাহত রাখছে। এতে চরাঞ্চল যেমন কৃষক শূন্য হয়ে পড়ছে, তেমনি প্রতিরক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে, পাশাপাশি শব্দ ও বায়ূদূষণে চরম দুর্ভোগ মানুষের।
এ বিষয়ে নদীর আমতলী ও বাগিলারা এলাকার একাধিক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা প্রভাবশালী মাটিখেকোদের ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাই না।
এ বিষয়ে কথা বলতে মাটি কাটা সিন্ডিকেটের কয়েকজনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, গোমতীর আমতলী অংশে কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে শর্ত সাপেক্ষে মাটি কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্তের বরখেলাপ করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, বিগত সময়ে একাধিকবার মাটি কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান করেছি। মাটি কাটার বিষয়ে আবারও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।