এম এ হান্নান, বাউফল (পটুয়াখালী)
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৪:০২ পিএম
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৮:৪৭ পিএম
কালাইঘাটে বাঁধা সারি সারি লঞ্চ। প্রবা ফটো
যান্ত্রিক ত্রুটি, সংস্কার ও যাত্রীসংকটের কারণ দেখিয়ে ঢাকা-বাউফল রুটে গত ১৫ দিন ধরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করেছেন লঞ্চ মালিকরা। এই নৌপথে ৪টি লঞ্চ চলাচল করত। লঞ্চ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এ রুটে যাতায়াতকারী যাত্রী, ব্যবসায়ী, ঘাট ইজারাদার ও শ্রমিকরা।
বাউফলের কালাইয়া, ধুলিয়া ও নুরাইপুর লঞ্চঘাট ইজারাদার ও শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-নুরাইপুর-কালাইয়া নৌপথে প্রায় ৫০ বছর যাবৎ লঞ্চ চলাচল করে। বাউফল এবং দশমিনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা কম খরচে নিরাপদে এ রুটে যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহন করে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘাটে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী সংখ্যা কমলেও নিয়মিত ৩০০ থেকে সাড়ে তিনশ যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হঠাৎই লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেন লঞ্চ মালিকরা। টানা ৭ দিন বন্ধ থাকে লঞ্চ। এরপর ১৬ দিন চলাচল করার পর আবারও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবশেষ গত ১৮ মার্চ কালাইয়া ঘাট থেকে এমভি বন্ধন-৫ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেলে আর কোনো লঞ্চ সদরঘাট থেকে আসেনি। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় কর্মব্যস্ত ঘাটগুলোয় এখন বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। অলস সময় কাটাচ্ছেন ইজারাদাররা।
এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা জানান, শিশু, নারী ও অসুস্থ রোগীর জন্য লঞ্চে ঢাকা যাতায়াত নিরাপদ এবং আরামদায়ক। লঞ্চ বন্ধ থাকায় এসব যাত্রী বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সোহরাব নামে আরেক যাত্রী বলেন, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে লঞ্চে ঢাকা যাত্রা আরামদায়ক ও নিরাপদ। লঞ্চ বন্ধ থাকায় গাড়িতে যেতে হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে, কষ্টও হচ্ছে। ঢাকা থেকে বাউফলে এই নৌপথে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, ফলসহ বিভিন্ন পণ্য আসত। একই সঙ্গে বাউফল থেকে মাছসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য কম খরচে ঢাকায় আসত। লঞ্চ বন্ধ থাকায় বিকল্প পথে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কালাইয়া বন্দরের পোশাক ব্যবসায়ী সুমন বলেন, সামনে ঈদ। ইতোমধ্যে বেচাকেনা বাড়ছে। ঢাকা থেকে লঞ্চে পোশাক আনা সহজ ও পরিবহন খরচ কম। লঞ্চ বন্ধ থাকায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
লঞ্চ বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকরা অর্থসংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কালাইয়া ঘাটের শ্রমিক সরদার কালু বলেন, এখানে ১২ জন শ্রমিক কাজ করে। লঞ্চ বন্ধ, তাই আমাদের কাজও বন্ধ। এতে সংসার চলাতে কষ্ট হচ্ছে।
কালাইয়া লঞ্চঘাট ইজারাদার শামীম হোসেন বলেন, ‘লঞ্চ বন্ধ থাকায় ঘাটের কর্মচারীদের নিয়ে সংকটে পড়েছি। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার লোকসান হচ্ছে।
নিমদী, নুরাইপুর ও ধুলিয়া ঘাটেও একই অবস্থা। এসব ঘাটের ইজারাদাররা বলেন, বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা লাভ করে নিয়েছেন লঞ্চমালিকরা। এখন যাত্রী কম থাকায় তারা লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এই রুটে চলাচলকারী এমভি ঈগল লঞ্চের সুপারভাইজার মো. বাদশা মিয়া বলেন, ‘ঈগল-৮ যান্ত্রিক ত্রুটি ও ঈগল-৫ সংস্কার কাজ চলায় বন্ধ রয়েছে। কাজ শেষ হলেই লাইনে ফিরব।
এমভি বন্ধন-৫ লঞ্চের সুপারভাইজার সজল ও এমভি সাব্বির-২ লঞ্চের সুপারভাইজার সুমন বলেন, যাত্রী কম। যে যাত্রী হয় তাতে মালিকের লস হয়। তাই লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছেন।
পটুয়াখালী নদী বন্দরের উপপরিচালক মামুন-অর-রশিদ বলেন, যাত্রী কমে যাওয়ায় মলিকরা লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছেন। ঈদের আগেই লঞ্চ চলাচল শুরু করতে মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলব।