লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের চার যুবক
চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:২৩ পিএম
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪ ১৯:৩৮ পিএম
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার এই চার যুবককে জিম্মি করে রাখা হয়েছে লিবিয়ায়। ছবি : কোলাজ প্রবা
ভাগ্য বদলাতে লিবিয়ায় গিয়ে দালালদের ফাঁদে পড়ে জিম্মি হয়েছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চার যুবক। গেল ২০ অথবা ২১ মার্চ তাদের জিম্মি করা হয় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। এরপর তাদের নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দ্রুত মুক্তিপণ দিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে অপহরণকারীরা। অন্যথায় জিম্মিদের হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দিচ্ছে তারা।
এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) জিম্মি যুবক বোরহান উদ্দিনের বড় ভাই সালাউদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘২০ অথবা ২১ মার্চ আমার ভাইসহ চারজনকে জিম্মি করে দালালরা। এরপর ২৪ মার্চ সকালে মোবাইলে কল করে আমাদের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। না হলে আমার ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা পর পর হোয়াটসঅ্যাপে কল করে মুক্তিপণ পাঠানোর জন্য তাগাদা দিচ্ছে। সোনালী ব্যাংকের চকরিয়া শাখার একটি হিসাব নম্বর দিয়ে ওই অ্যাকাউন্টে মুক্তিপণ জমা দিতে বলেছে অপহরণকারীরা।’
জিম্মি যুবকরা হলেন- আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন, একই এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো. ওয়াসিম, আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন।
অপহৃতদের স্বজনরা জানায়, আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম কাউকে মসজিদ, কাউকে হাসপাতাল আবার কাউকে দোকানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে নেন। প্রথমে যুবকদের ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের তুলে দেওয়া হয় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার বাসিন্দা মো. মিজানের হাতে।
মিজান তিন দিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিজের কাছে নিয়ে নেন। সাত দিন পর দুবাই থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি মিসর হয়ে তাদের লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে মিজান অন্য দালালের হাতে তুলে দেন চট্টগ্রামের এই চারজনকে। ওই দালালরাই এখন তাদের স্বজনদের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করছে। মুক্তিপণ না পেলে অপহৃত যুবকদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছেন।
অপহৃত যুবকদের একজনকে নির্যাতনের একটি ভিডিও প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, হাত-পা বেঁধে, মুখে কাপড় গুজে দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে ওই যুবককে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছে অপহৃত যুবকদের স্বজনরা।
এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে সালাউদ্দিন বলেন, ‘২৪ মার্চ সকালে প্রথম কল করে মুক্তিপণ দাবি করার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি দিন কয়েক দফায় কল দিয়ে টাকা দাবি করছে। কল করে বলে, আমি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিচ্ছি ওই অ্যাকাউন্টে টাকা দাও। টাকার জন্য প্রতিনিয়ত কল দিচ্ছে। মোবাইল বন্ধ থাকলে তখন ভয়েস মেসেজ পাঠাচ্ছে। টাকা কেন দিতে হবে জানতে চাইলে অপহরণকারীরা আমাদের বলে, তোমার ভাইকে আমাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তাই এখন ছাড়াতে হলে মুক্তিপণ দিতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মুক্তিপণের জন্য যারা যোগাযোগ করছেন সবাই বাংলা ভাষায় কথা বলছেন। অপহরণকারীরা সবাই বাংলাদেশেরই লোক। যেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর জন্য বলা হচ্ছে, সবগুলো চকরিয়া ব্র্যাঞ্চের। তাই আমাদের ধারণা, এই অপহরণের সঙ্গে বাংলাদেশের লোকজনই জড়িত।’