× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পরিবারের খরচ মেটাতে মধ্যবিত্তের হিমশিম অবস্থা

রাজু আহমেদ, রাজশাহী

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১১:১৩ এএম

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৯:০৪ পিএম

রাজশাহী মহানগরীর এক বাজারে কেনা বেচার দৃশ্য। প্রবা ফটো

রাজশাহী মহানগরীর এক বাজারে কেনা বেচার দৃশ্য। প্রবা ফটো

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করা রাশেদ নিজাম নগরীর একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বেতন পান সর্বসাকল্যে ১৮ হাজার টাকা। করোনার পর থেকে সবকিছুর দাম বাড়লেও তার পরিশ্রমের মূল্য বাড়েনি। বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ওষুধ খরচ, সংসার খরচ ও বাড়িভাড়া বেড়েছে। বেড়েছে বিদ্যুতের বিলসহ রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের দাম। বছরের ব্যবধানে রাসেলের ব্যয় বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।

রাশেদ বলেন, রাজশাহী শহরে প্রতি স্কয়ার ফুট অ্যাপার্টমেন্টে রেট ৩ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। চার বছর হতে চলেছে বেতন বাড়েনি। এসব নিয়ে কথা বলতেও ভয় হয়। না জানি কখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে উল্টো কর্মচারী ছাঁটাইয়ে নামে মালিক পক্ষ। মা, আমি, স্ত্রী ও সন্তানÑ এই চার সদস্যের পরিবার। আজ থেকে দুই বছর আগেও বেতনের টাকায় কাঁটায় কাঁটায় মাস চলতে পারতাম। এখন সংসার চালাতে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় তো দূরের কথা বরং সঞ্চয় করে রাখা টাকাই এখন ভাঙাতে হচ্ছে সংসার চালাতে। সেই সঙ্গে করতে হচ্ছে ধারদেনা। ঈদ-পরব এলে তো এখন আনন্দের চেয়ে দুশ্চিন্তাই বাড়ে।

রাজশাহীর মতো শহরে ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর পেছনে এই ব্যয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই অর্থের সিংহভাগই ব্যয় হয় একাধিক প্রাইভেট ও কোচিংয়ে। মাসের হিসাবে যা ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। 

আশপাশের উপজেলা থেকে উচ্চবিত্ত পরিবার তাদের সন্তানদের নিয়ে শহরমুখী হচ্ছে। এর প্রধান কারণ সন্তানদের শহরের নামকরা কোচিং এবং প্রাইভেটে দেওয়া। গ্রামের স্কুল বা কলেজ এড়িয়ে শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা। এসব পরিবারের যারা শহরমুখী তাদের অধিকাংশ পুরুষই সরকারি চাকরিজীবী নয়তো বড় ব্যবসায়ী। স্ত্রীরা শহরে বাড়ি ভাড়া করে সন্তান নিয়ে থাকছেন। স্বামী গ্রামে তার কর্মে নিয়োজিত থাকলেও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে শহরের ওই বাড়িতে থাকেন। তার প্রধান কাজ সন্তানকে স্কুল ও প্রাইভেটে নিয়ে যাওয়া ও আসা। 

এই শহরে দুইটি রুমের বাড়িভাড়া এলাকা ভেদে মাসে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা। ৪ সদস্যের মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের খাবারের জন্য বাজার খরচ মাসে ৮ হাজার টাকা।

এর ওপর অসুখবিসুখের কারণে চিকিৎসা ব্যয় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। ওষুধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চিকিৎসকের ফিসহ রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন টেস্ট বা ডায়াগনস্টিক ফি। বর্তমানে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে গুনতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। 

রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে অবস্থিত আলিফ মেডিসিনে কথা হয় আমিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, গত ছয় মাসে সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এখনও প্রতিদিনই কোনো না কোনো কোম্পানির ওষুধের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ৪০ থেকে ৫০ টাকা মূল্যের এক পাতা ওষুধের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। সম্প্রতি একটি ওষুধ কোম্পানির ২৮ পদের ওষুধের দাম একত্রে বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি ওষুধের দোকানিদের জানিয়েছেন, একদিকে ডলার সংকট অন্যদিকে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের কাঁচামাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

ওষুধ ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলামের দেয়া তথ্যমতে, এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে তার মতো ব্যবসায়ীদের ওপর। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ওষুধের দাম বাড়ার ফলে অনেকেই এক মাসের ওষুধের জায়গায় ১৫ বা ২০ দিনের ওষুধ কিনছেন। অর্থাৎ নির্ধারিত প্রেসক্রিপশনের চেয়ে ওষুধ সেবন কমিয়েছেন রোগীরা। এদিকে কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়ানোর ফলে ফার্মেসির মালিকদের বিনিয়োগ করতে হচ্ছে বেশি টাকা। বিনিয়োগ বাড়লেও তাদের লভ্যাংশ এবং বিক্রি বাড়েনি। ফলে দোকানে ওষুধের স্টক কমেছে। 

রাশেদরা চলছেন কীভাবে?

রাশেদ সংসারের ব্যয় কমাতে মাসের বাজারে আমিষজাতীয় ও পুষ্টিকর খাবার কমিয়েছেন। ভাঙিয়েছেন সঞ্চয়পত্র। স্থানীয় একটি এনজিও থেকে স্ত্রীর নামে নিয়েছেন ঋণ। বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটি ডিপিএস করার কথা থাকলেও তা আর সম্ভব হয়নি। ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া বাচ্চার বাংলা ও অঙ্কের প্রাইভেট বন্ধ করে নিজেই ওই বিষয়গুলো পড়াচ্ছেন। আগে অটোরিকশায় অফিসে যাওয়া-আসা করলেও এখন তিনি একটা পুরাতন সাইকেল কিনেছেন অফিসে যাতায়াতে। সংসারের ব্যয় মেটাতে ডিগ্রি পাস স্ত্রীর জন্য খুঁজছেন চাকরি। এরই মধ্যে তিনি নগরীতে একটি অভিজাত পোশাকের শোরুমে তার স্ত্রীর সিভি দিয়ে এসেছেন। সেলসম্যানের চাকরিটি জুটলে তার স্ত্রীকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে সেখানে। তখন সংসার সামলাবেন বৃদ্ধ মা।

রাশেদের মতো মধ্যবিত্তের পরিবারের জন্য নুন আনতে প্রান্তা ফুরালেও এই শহরে প্রতিনিয়ত অট্টালিকার সংখ্যা বাড়ছে। একাধিক রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান একের পর এক অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে তুলছে। এসব অ্যাপার্টমেন্টের কোনোটিই ক্রেতার অভাবে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে নেই। বাড়ছে বিলাসবহুল মার্কেটসহ আধুনিক পোশাক, প্রসাধনী ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের নজর কাড়া সব শোরুম। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্থানীয় এনজিওগুলো থেকে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতার সংখ্যা। যাদের অধিকাংশই রাশেদের মতো পরিবারে নারী।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা