আব্দুর রহমান মিল্টন, ঝিনাইদহ
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১৪:২০ পিএম
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১৪:২৫ পিএম
ঝিনাইদহের শৈলকুপার কাতলাগাড়ী বাজারে পাউবোর খালের দুই পাশে নিম্নমানের ব্লক বসানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রবা ফটো
শৈলকুপার কাতলাগাড়ী বাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রধান সেচ খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ শেষ হয়নি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও। সেতুটির ছাদের ঢালাই শেষ হলেও বাকি সংযোগ সড়ক, খাল খনন ও দুই পাশের কনক্রিটের ব্লক বসানোর কাজ।
কাজের এই ধীরগতির পাশাপাশি পাওয়া গেছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। আর এসব অনিয়মের পেছনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পাউবো কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ফলে মাঝপথে কয়েকবার নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় এলাকাবাসী। সম্প্রতি ফের নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু হলে গতকাল শনিবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে স্থানীয়রা। দুপুরে কাতলাগাড়ী বাজারে এই বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশ নেয় কয়েক গ্রামের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
তবে পাউবো কর্মকর্তাদের দাবি, কাজ সঠিক নিয়মেই হচ্ছে। মাঝে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছু অনিয়ম করায় জরিমানাও করা হয়েছে। আর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদিকে সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে হাজারো মানুষ। বিশেষ করে এই সেতু দিয়ে প্রায় ১১টি গ্রামীণ সড়কের সংযোগ রয়েছে। ফলে বাড়ি থেকে বের হয়েই দুর্ভোগে পড়তে হয় এসব সড়কে চলাচলকারীদের।
জানা যায়, পাউবোর গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় কাতলাগাড়ী সেচ খালের ওপর সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। এছাড়া সংযোগ সড়ক, ব্রিজের তলদেশ খনন ও দুই পাশে ব্লক বসানোর জন্য আরও প্রায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার মেসার্স আবুল কালাম আজাদ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায়। ২০২৩ সালের মধ্যেই সেতুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এলাকাবাসীর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরীক্ষাগারে পাঠানো হয় ব্লক। পরীক্ষাগার থেকে জানানো হয়, তৈরিকৃত এসব ব্লক খুবই নিম্নমানের। এরপর প্রায় এক বছর কাজ বন্ধ থাকে।
সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেই নিম্নমানের পরিত্যক্ত ব্লকেই ফের কাজ শুরু করায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, ব্রিজের উভয় পাশের অন্তত ১ কিলোমিটার পানির প্রবাহের জন্য ঠিকমতো খনন না করলে সেচ ও কৃষি কাজ ব্যাহত হবে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া সেলিম হোসেন জানান, ব্রিজটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। ১১টি গ্রামীণ সড়কের সংযোগস্থল এটি। তিনি অভিযোগ করেন, পাউবো কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে আজও কাজ শেষ হয়নি, বারবার কেবল বন্ধ হয়ে যায়।
নাজমুল হোসেন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ব্রিজের সংযোগ সড়কে ৫৪ লাখ, পানিপ্রবাহের সক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য ব্রিজের তলদেশের উভয় পাশের ১ কিলোমিটার খননের জন্য ২৬ লাখ এবং কনক্রিটের ব্লকের জন্য ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও রাতের আঁধারে দায়সারা কাজ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাউবোর অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
একই ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। ইউপি চেয়ারম্যান মাহামুদুল হাসান মামুন অভিযোগ করে বলেন, ইট, বালি, পাথরসহ নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে নয়ছয় করে কাজ শেষ করার পাঁয়তারা চলছে। কাজের অনিয়মের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করানো হলে তারা বলছেন, কোনো অনিয়ম নেই, বাধা এলেও কাজ শেষ করা হবে।
জানতে চাইলে পাউবো বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ব্রিজের নির্মাণকাজের মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হলেও মেয়াদ এবং অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া নিম্নমানের ব্লক দেওয়ার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এখানে নতুন তিনি এসেছেন, ব্রিজের কাজটি যাতে সঠিক হয় সে খোঁজখবর রাখছেন।