× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তেলিয়াপাড়া দিবস আজ

গৌরবের স্মৃতিজুড়ে অবহেলার ধুলো

মো. মহিউদ্দিন আহাম্মদ, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২২ এএম

আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২৯ এএম

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিবিজড়িত তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজার বাংলো।  প্রবা ফটো

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিবিজড়িত তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজার বাংলো। প্রবা ফটো

৪ এপ্রিল, ১৯৭১। এ দিন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল চূড়ান্ত করার প্রথম বৈঠক। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঊর্ধ্বতন ২৭ সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওই বৈঠকেই রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টর ও ৩টি ব্রিগেডে ভাগ করা হয়। এ ছাড়া নেওয়া হয়েছিল কালজয়ী নানা সিদ্ধান্ত। 

তবে ঐতিহাসিক বাংলোটি এখন চা কোম্পানির সীমানাপ্রাচীরে প্রায় অবরুদ্ধ। দীর্ঘ দিনেও গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানের স্মৃতি সংরক্ষণেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। সর্বশেষ একযুগ আগে নেওয়া এলজিইডির ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের কাজ শুরু হয়নি আজও। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের দাবি, দ্রুত বাংলোটিকে জাদুঘর করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

মাধবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও সদস্য সচিব এনাম খাঁ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলেও সেটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ ছিল না দীর্ঘদিন। গত ২০১১ সালের ৭ মে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সমাবেশে সেখানে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করার কথা ঘোষণা করা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, বর্তমান কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। সভায় উপস্থিত এলজিইডির তখনকার প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য। পরবর্তী সময়ে এলজিইডি ৩ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু সেই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। উপরন্তু ন্যাশনাল টি কোম্পানি স্মৃতিসৌধকে পৃথক করে বাংলোটিকে বাউন্ডারি দিয়ে আলাদা করে ফেলে। একসময় সেখানে তারকাঁটার বেড়া থাকলেও ছিল একটি পকেট গেট। কিন্তু বর্তমানে বাউন্ডারি থাকায় কেউ দেখতে পারেন না বাংলোটিকে। 

মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সকল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানকে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ১০০ একর জমিতে সেখানে কমপ্লেক্স করে বিভিন্ন ভাস্কর্য করার কথা ছিল, কিন্তু কিছুই করা হয়নি। সেখানে স্মৃতিসৌধটি অবহেলিতভাবে পড়ে আছে। বছরে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ছাড়া সেখানে যাওয়া থাকে না কোনো কার্যক্রম। 

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সম্পাদকমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) কবির হোসেন বলেন, তেলিয়াপড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান স্মৃতিবিজড়িত স্থান। অবশ্যই এটিকে সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি অবিলম্বে সেখানে রেস্ট হাউস নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের দাবি জানান। পাশাপাশি ঐতিহাসিক বাংলোটিকে জাদুঘর করার দাবি জানান।

মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের বিষয়ে জানতে চাইলে মাধবপুর উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি নতুন এসেছি। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব বিষয়টি।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে এবারও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসনের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। তবে রমজানের কারণে সীমিত আকারে পালিত হবে এসব অনুষ্ঠান।

মাধবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও সদস্য সচিব এনাম খাঁ বলেন, তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তপক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এ ছাড়া তাদের স্মৃতি তুলে ধরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফয়সাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, দিবসটি উপলক্ষে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। 

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কর্নেল (অব.) আতাউল গণি ওসমানী, তৎকালীন মেজর সিআর দত্ত, মেজর জিয়াউর রহামন, কর্নেল এমএ রব, রব্বানী, ক্যাপ্টেন নাসিম, আব্দুল মতিন, মেজর খালেদ মোশাররফ, কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, ভারতের ব্রিগেডিয়ার শুভ্রমানিয়ম, এমপিএ মৌলানা আসাদ আলী, লে. সৈয়দ ইব্রাহীম, মেজর কেএম শফিউল্লাহ প্রমুখ।

কর্নেল (অব.) এমএজি ওসমানীর নেতৃত্বে নেওয়া হয় যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি। শপথবাক্য পাঠ করানোর পর নিজের পিস্তল থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন এমএজি ওসমানী। ওই সভায় ১০ এপ্রিল দ্বিতীয় বৈঠক ও সরকার গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি।

পরে ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর কেএম শফিউল্লাহ তার হেডকোয়ার্টার স্থাপন করেন তেলিয়াপাড়া চা বাগানে। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখান থেকে মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে ওঠে। কর্নেল (অব.) এমএজি ওসমানীসহ কয়েকটি সেক্টরের কমান্ডারগণ বিভিন্ন সময়ে তেলিয়াপাড়া সফর করেন। ম্যানেজার বাংলোসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনানায়কদের পদচারণায় মুখরিত। ১৯৭১ সালের ২১ জুনের পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেডকোয়ার্টার তুলে নেওয়া হয়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২, ৩ ও ৪ নম্বর সেক্টরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তেলিয়াপাড়া চা বাগান ম্যানেজার বাংলোর পাশে নির্মিত হয় বুলেট আকৃতির মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিসৌধ। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে এ স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ বীর উত্তম।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা