নোয়াখালী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৪১ পিএম
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩৮ পিএম
ছাত্রলীগ নেতা মো. রমজান আলীর সারা শরীরে ফোসকা উঠেছে। প্রবা ফটো
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মানছুরুল হক নামের এক উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। ‘তার চিকিৎসায়’ ছাত্রলীগ নেতা মো. রমজান আলীর সারা শরীরে ফোসকা উঠেছে। বর্তমানে তিনি ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে নোয়াখালী সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রমজান আলীর বাবা আহসান উল্যাহ। তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানিয়েছেন তিনি এখনও অভিযোগটি হাতে পাননি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তমরদ্দি গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী ছাত্রলীগ তমরদ্দি ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা শাখার সাধারণ সম্পাদক। অভিযুক্ত মনছুরুল হক হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ জানুয়ারি মসজিদের টয়লেটে পড়ে বাঁ পায়ের গোড়ালিতে গুরুতর আঘাত পায় রমজান আলী। তাকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রমজান আলীর জখম গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হাতিয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ফরহাদ আলী নামের একজন জানায় উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মানছুরুল হক ভালো করতে পারবে। তাই রমজান আলীকে বেসরকারি হাসপাতাল মাহি মেডি কেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপারেশন শেষে প্রতিদিন ৩টি করে ইনজেকশন (মেরোপেনেপ গ্রুপের আই পেনাম ১ গ্রাম) ১৪ দিন দেওয়ার কথা বলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ১৪ দিনে ৪২টি ইনজকেশন দেওয়া হয়। এরপর রমজান আলীর সমস্ত শরীরে ফোসকা বের হয়।
রমজান আলীর বাবা আহসান উল্যাহ বলেন, ‘আমার ছেলে মৃত্যুশয্যায়। মানছুর ডাক্তার আমার ছেলেকে ১৪ দিনে ৪২টা ইনজেকশন দিয়ে পঙ্গু করে ফেলছে। আমি মানছুর ডাক্তারের বিচার চাই। আমার ছেলে আমার কাছে ফিরে আসুক। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি।’
হাতিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদ উদ্দিন বলেন, ‘রমজান আলীকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ায় সে আজ মৃত্যু শয্যায়। হাতিয়ার মানুষ সহজ সরল। এই সহজ সরল মানুষ যখন ডাক্তার দেখাতে আসে তখন ফার্মেসির পেছনে চেম্বারে কিছু নামধারী চিকিৎসক সার্জন না হয়েও অপারেশন করে আসছে। যেগুলো হাসপাতালে হওয়ার কথা থাকলেও তারা চেম্বারে করছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব যেন হাতিয়ার মানুষ সুচিকিৎসা পায় এবং ব্যাঙের ছাতার মতো ফার্মেসির পেছনের অবৈধ চেম্বার বন্ধ হয়।’
হাতিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভুল চিকিৎসার কারণে রমজান আলী মৃত্যুর মুখোমুখি। তাদের আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ যে চিকিৎসার ভার তারা বহন করতে পারছে না। আমরা হাতিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ মর্মাহত। ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। না হয় ছাত্র সমাজ আন্দোলনের মাধ্যমে এসব ভুয়া চিকিৎসককে প্রতিরোধ করবে।’
অভিযোগের বিষয়ে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মানছুরুল হক বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে আমি ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার দেখছি। এটা দিন দিন বাড়ছে। রমজান আলী আমার চিকিৎসায় অসুস্থ হয়নি। তার পরিবারের কেউ আমার বিরুদ্ধে বলে না। আমি তাদেরকে হাতিয়ার বাইরে যেতে বলি। তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আমার দায়িত্ব না পড়ার পরও আমি মানবিক কারণে চিকিৎসাটা করেছি। আমার চিকিৎসায় কোনো অসুবিধা হয়নি এটা আমি হলপ করে বলতে পারি। আমি হাতিয়ার ছেলে তাই মানবিক জায়গা থেকে রমজান আলীর চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছি। আমি চাই রমজান আলী সুস্থ হোক।’
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খাদিজা রহমান বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাইনি। আপনার মাধ্যমে মাত্র জানতে পারলাম। এমন অভিযোগ যার বিরুদ্ধেই হবে সে যেই হোক আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। পাশাপাশি অবৈধ ক্লিনিক ও ফার্মেসির পেছনে অবৈধ চেম্বারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমি এসব অনিয়মের বিষয়ে সোচ্চার আছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সোচ্চার আছে।’