× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যাতায়াত সুগম হলে প্রবাসীরাই বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১৪ পিএম

আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৪৭ পিএম

সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি : সংগৃহীত

সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি : সংগৃহীত

২০২২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার ধামরাইতে ‘শৈলান প্রবীণ নিবাস’ যাত্রা আরম্ভ করে। প্রবীণ নিবাসটির পরিকল্পনা যখন চলছিল তখন ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ এটা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি জায়গাও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি করার সাহস পাইনি। কারণ সন্দ্বীপে আসা-যাওয়া বিশাল ভোগান্তির ব্যাপার। 

চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ আমার জন্মভূমি। অনেক পুরোনো একটা জনপদ। সেখানকার মানুষের জীবনে অনেক সংকট। মানুষ চিকিৎসা পায় না, ভালো ডাক্তার থাকে না। সরকারি কর্মকর্তারা থাকতে চান না, ইঞ্জিনিয়াররা থাকতে চান না, ভালো শিক্ষকরা থাকেন না। সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ গেল বেশ কয়েক বছর আগে। কিন্তু সেভাবে কোনো কারখানা গড়ে ওঠেনি। এর মূল কারণ যাতায়াত ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। বাংলাদেশের কোথাও এত খারাপ যাতায়াত ব্যবস্থা নেই। ছোট ছোট নৌযান দিয়ে নানা হয়রানি মোকাবিলা করে সন্দ্বীপ পৌঁছতে হয়। কেউ যদি চট্টগ্রাম থেকেও সন্দ্বীপ যেতে চান তাকে প্রথমে গাড়ি নিয়ে কুমিরা ঘাটে যেতে হবে। তারপর লালবোট দিয়ে জাহাজে উঠতে হবে। জাহাজ থেকে আবার ওই পাড়ে গিয়ে লালবোটে নামতে হবে। আবার গাড়ি। আধুনিক সমাজে এত ভোগান্তি কে পছন্দ করে?

সন্দ্বীপের চেয়ে অনেক অনুন্নত দ্বীপ ছিল চরবাটা। একসময় চরবাটায় সন্দ্বীপের ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতেও মানুষ চিন্তা করত। সেই দ্বীপে এখন ঢাকা থেকে ছয় ঘণ্টায় একটা গাড়িতে করে চলে যাওয়া যাচ্ছে। সন্দ্বীপের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি।

এসব সমস্যার প্রধান কারণ অবশ্য ভৌগোলিক। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ভাঙনকবলিত এই দ্বীপের এক পাশে মেঘনার প্রবল স্রোত অন্য পাশে খরস্রোতা সন্দ্বীপ চ্যানেল। ভৌগোলিক কারণে যে সীমাবদ্ধতা তা মোকাবিলায় রাজনৈতিক নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতার মূল কারণ তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ। নেতা হিসেবে একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে যেভাবে কর্তৃত্ব করা যায়, মূল ভূখণ্ডে তা যায় না। এই কারণে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনে তাদের আগ্রহ কম। 

নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সন্দ্বীপের সঙ্গে নোয়াখালীর সংযোগ সড়ক হওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছিল। সন্দ্বীপের তখনকার সংসদ সদস্যের বিরোধিতায় সেটা সম্ভব হয়নি। জনশ্রুতি আছে তিনি নাকি বলছিলেন, ‘এই রাস্তা হয়ে গেলে বাইরে থেকে সাহেবসুবোরা সবাই চলে আসবে। আমাদের কী হবে তখন।’ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বিভক্তি সবখানেই থাকে। সন্দ্বীপের মতো এমন কোথাও দেখিনি। নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েও বিরোধী দলের হলে এলাকায় থাকতে পারেন না। আবার সরকারি দলের মধ্যেও ভিন্নমতের প্রতিপক্ষেরও একই অবস্থা। যেমন সরকারি দলের উপকোন্দলের দুর্বল অংশের নেতারাও এলাকার বাইরে থাকতে বাধ্য হন। নেতাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে ঐকমত্য নেই। সন্দ্বীপের নানা সমস্যা নিয়ে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন সচিবকে জানিয়েছিলাম। তিনি পরে সন্দ্বীপ ঘুরে এসে বললেন, এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় এমন একটা উদ্যোগ নিতে। 

তখন আমি ইডকলের (ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড) বোর্ডের পরিচালক। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ডিজি ছিলেন চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। তিনিও সন্দ্বীপের সন্তান। আমরা একটা প্ল্যান করি। ইডকলের সোলার হোম সিস্টেম এবং বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন কর্মসূচির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান সন্দ্বীপে আয়োজন করার। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর বাইরে একটা রাজনৈতিক জনসভা ও একটা সুধী সমাবেশ করার কথা ছিল। সুধী সমাবেশে সন্দ্বীপের সমস্যার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানানোই উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এই সুধী সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতারা এমন রশি টানাটানি শুরু করলেন শেষে সুধী সমাবেশ বাদ দিতে হলো।

ঐকমত্যের অভাবে সন্দ্বীপ থেকে কোনো জাতীয় নেতা সৃষ্টি হয়নি। ভোলার দিকে তাকালে দেখা যায়- তোফায়েল আহমেদ, নাজিউর রহমান মঞ্জু, আন্দালিব রহমান পার্থ, মেজর (অব.) হাফিজের মতো এমন অনেক জাতীয় পর্যায়ের নেতা আছেন। সন্দ্বীপে একজনও জাতীয় পর্যায়ের নেতা প্রডিউস করতে পারেনি। ভোলা পেরেছে কারণ ভোলার নেতাদের মধ্যে ভৌগোলিক স্বার্থের বিষয়ে ঐকমত্য আছে। ভোলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেকগুলো বিষয়ে তারা ঐক্যবদ্ধ। ফলে তারা অনেক আগে বিদ্যুৎ পেয়েছে, সেখানে ফেরি চলাচল করে অনেক আগ থেকে। কিন্তু সন্দ্বীপে তেমন হয় না। 

সন্দ্বীপে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা সারা দেশের প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয়, তৃতীয় স্তরের নেতা। বিএনপির আমলে তারা নোয়াখালীর মওদুদ আহমদ আর আওয়ামী লীগের আমলে ওবায়দুল কাদের কিংবা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ওপর নির্ভরশীল। একটা এলাকার যে নিজস্ব স্বার্থ কিংবা অস্তিত্ব এটা সন্দ্বীপের রাজনীতিবিদরা কখনও প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। সন্দ্বীপের উন্নয়নে আশপাশের এলাকাগুলোর সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষেত্রে তারা দুর্বল।

এখন সন্দ্বীপে নদী ভাঙনের সমস্যা সমাধান হয়েছে। বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। সন্দ্বীপের ভেতরের রাস্তাঘাট আবার বেশ উন্নত। শুধু সুষ্ঠু নৌ-যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা খুব জরুরি। এসব ছোট জাহাজ এবং ১৫-২০ জন যাত্রী নেওয়া স্পিডবোট দিয়ে হবে না। জাহাজ তো একটা গাড়িও নিতে পারে না। আবার অবকাঠামো নির্মাণকাজের জন্য রডসহ নির্মাণসামগ্রী পরিবহন অনেক কষ্টের আর ব্যয়সাপেক্ষ। এসব সমস্যার সমাধান না হলে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। এটি দেশের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স জোগান দেওয়া উপজেলা। যাতায়াতের অসুবিধা দূর করা গেলে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত সন্দ্বীপের প্রবাসীদের কাছে যে পরিমাণ টাকা আছে তাদের পক্ষেই ২০০-৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা কোনো ব্যাপার না। 

ফেরি চলাচল চালু হলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। চাইলে সেটা ছয় মাসের মধ্যে করা সম্ভব। পদ্মা সেতু হওয়ায় অনেক ফেরি উদ্বৃত্ত আছে। এর জন্য বড় কোনো অবকাঠামোও দরকার হবে না। আরিচা ঘাটের রাস্তাগুলো বেশিরভাগ মাটির। ফেরি ঘাটের জন্য স্থায়ী কোনো কাঠামোও লাগে না। ঘাটটা সময়ে সময়ে একেক দিকে পরিবর্তন করে নিতে হবে। ভাসমান একটা পন্টুন ব্যবহার করলেই হয়। অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল হলে সেখানে সেতু করার সম্ভাবনাও তৈরি হবে। 

লেখক : সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা