× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিচ্ছিন্ন সন্দ্বীপের স্বাস্থ্যসেবা

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০৮ পিএম

আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০৯ পিএম

যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেয় সন্দ্বীপের সাধারণ মানুষ। রোগী পারাপারে একটি সি-অ্যাম্বুলেন্সের জন্য স্থানীয়দের দাবি থাকলেও দীর্ঘদিনেও তার ব্যবস্থা হয়নি। ছবি: নিপুল কুমার দে

যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেয় সন্দ্বীপের সাধারণ মানুষ। রোগী পারাপারে একটি সি-অ্যাম্বুলেন্সের জন্য স্থানীয়দের দাবি থাকলেও দীর্ঘদিনেও তার ব্যবস্থা হয়নি। ছবি: নিপুল কুমার দে

‘প্রায় ১০ ঘণ্টা চোখের সামনে ছটফট করে মারা গেল কুলসুমা। এই দুঃখ ভুলতে পারি না। একটা ছেলে আছে। তার দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। ’স্ত্রীর মৃত্যুর কথা এবং মা হারানো শিশুছেলের মনের কথা এভাবে বর্ণনা করলেন সন্দ্বীপের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম।

২০২২ সালের ১১ মে রাত ১২টার দিকে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা কুলসুমা বেগম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে সন্দ্বীপের বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে তাকে চট্টগ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু রাতে সেখান থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর জানা গেল, বিরূপ আবহাওয়ায় জাহাজ ছাড়া কোনো নৌযান ছাড়বে না। সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া জাহাজ এমভি আইভি রহমান চট্টগ্রাম পৌঁছে সকাল ১০টায়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ১০টায় অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় কুলসুমার।

সন্দ্বীপ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম সেদিনের সেই দুর্বিষহ স্মৃতির বর্ণনা দিলেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে। তিনি বলেন, ‘যদি এখানে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকত, অথবা যাতায়াতের একটু সুবিধা থাকত, তাহলে তাকে হয়তো বাঁচাতে পারতাম।’

একই অভিজ্ঞতা মুছাপুরের ইকবাল হোসেনের। তার এক মাস বয়সি ভাতিজার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত চট্টগ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সকাল ১০টার দিকে ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে স্পিডবোট বন্ধ। সেই অবস্থায় ঘাট থেকে তারা ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে। চিকিৎসকের রেফারেন্স দেখানোর পর বিশেষ বিবেচনায় স্পিডবোট চালানোর অনুমতি দেন তিনি। চট্টগ্রাম মেডিকেলে পৌঁছার পর চিকিৎসক জানান, দেরি হয়ে গেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিনই মারা যায় শিশুটি।

শুধু ইকবাল বা সাইফুল নয়। দ্বীপের শত শত মানুষের এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই উপজেলায় বিশেষায়িত কোনো চিকিৎসাসেবা নেই। একটু জটিল কিছু হলেই ছুটতে হয় চট্টগ্রামে। যাতায়াত ব্যবস্থার সুব্যবস্থা না থাকায় চট্টগ্রাম আসতেও দুর্ভোগে পড়তে হয়। রোগী পারাপারের জন্য একটি সি-অ্যাম্বুলেন্সের জন্য স্থানীয়দের দাবি থাকলেও তার ব্যবস্থা হয়নি। ফলে প্রায়ই এভাবে নির্মম মৃত্যুর শিকার হন সেখানকার বাসিন্দারা। এর কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব আছে কি না জানতে চাইলে দ্বীপের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মানস বিশ্বাস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অনেকগুলো ঘটনাই ঘটেছে এমন। এর কোনো তালিকা করা হয় না।’ উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপজেলায় কিছুদিন আগেও ১৭ জন ডাক্তার ছিলেন। বর্তমানে ১১ জন আছেন। তবে কোনো সার্জন বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে এখানে সিজারিয়ান অপারেশন করা যায় না। মারামারিতে আহত রোগী এলেও চট্টগ্রাম পাঠাতে হয়।’ 

তবে গত কয়েক বছর ধরে দ্বীপের চিকিৎসা খাতে বেসরকারি উদ্যোগ নিচ্ছেন অনেকে। ইয়ুথ গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান রেজাকুল হায়দার মঞ্জুর উদ্যোগে বিশাল পরিসরে স্বর্ণদ্বীপ ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০২০ সালে। এ ছাড়াও দ্বীপ মেডিকেল সেন্টার নামে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবায় বেশ কয়েক বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই দুই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনসহ বিভিন্ন রকমের সার্জারি হচ্ছে। সেবা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও। কিন্ত সব চিকিৎসা হয় না সেখানে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও দুটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে ২০০ রোগী চট্টগ্রাম শহরের হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়া প্রচুর রোগী স্ব-উদ্যোগে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম যান। ‘সি’ অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় সাধারণ যাত্রীবাহী স্পিডবোট বা কাঠের নৌকায় চড়ে চট্টগ্রামের পথ ধরেন তারা। পথে অনেকেই মারা যান।

দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, ‘প্রথম দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছি। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পরও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুতই একটি ‘সি’ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করবেন তিনি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা