সাইফুল ইসলাম, মাদারীপুর
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৪ পিএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৪২ পিএম
মাদারীপুরের উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কার্যালয়। প্রবা ফটো
মাদারীপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার উজ্জ্বল মুন্সীর বিরুদ্ধে অভিনব কায়দায় অসহায় শতাধিক প্রতিবন্ধীর ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৫ হাজার ৩৭০ জন প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেওয়া হয়। এর মধ্যে শতাধিক প্রতিবন্ধীর অভিভাবকের বিকাশ নম্বরে বছরে একবার বা দুইবার ২ হাজার ৫৫০ টাকা করে আসলেও সিংহভাগই ভিন্ন ভিন্ন বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে নিজেই উত্তোলন করে নিয়েছেন।
অথচ, এর কিছুই জানে না বহু প্রতিবন্ধীর অভিভাবক। সময়মতো ভাতা না পেয়ে ভুক্তভোগী অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে দিনের পর দিন সময় কাটাচ্ছেন অফিসের বারান্দায়। সেখানেও তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ইমন শেখের মা শেফালী কয়েক মাস ভাতা না পেয়ে দুই মাস আগে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের নিকট আবেদন করেন।
দুই মাস পর গত বুধবার বিষয়টি সাংবাদিকদের অবগত করেন ভুক্তভোগীরা। ওইদিন শেফালী বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বিকাশ নম্বরে টাকা ঢোকে নাই। উপজেলা অফিসে গিয়ে জানতে পারি অন্য একটি বিকাশ নম্বরে টাকা চলে গেছে।’
সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করার পর বিষয়টি সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার উজ্জ্বল মুন্সী জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে শেফালীকে অফিসে ডেকে নিয়ে নগদ ৩ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দেন। শেফালীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সবকিছু সমাধান হয়ে গেছে।’ অফিসারের চাপে পড়ে তিনি এখন বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিবন্ধী ইমন শেখের যে বিকাশ নম্বর, সেটিতে টাকা পেয়েছেন কয়েক কিস্তি। ইমন শেখ অভিযোগ দেওয়ার পরে দেখা গেছে, তার টাকা গিয়েছে অন্য একটি নম্বরে। একই বিকাশ নম্বরের টাকা এখন আসে পূর্ব খৈয়ারভাঙ্গা হালিমা বেগমের নামে। অথচ হালিমা বেগম ও ইমন কেউ জানে না এই নম্বর কার। হালিমা বেগমের দুটি বিকাশ নম্বরের সঙ্গে ওই নম্বরের কোনও মিল নেই বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে সদর উপজেলার ঘটকচর গ্রামের আলোচন বেগম বলেন, ‘সাত মাস হলো আমার বয়স্ক ভাতা পাই না এবং আমার ছেলে সাহাবুদ্দিনের প্রতিবন্ধী ভাতাও পাই না। আমি অফিসে গিয়েছি তারা বলেছে, নতুন মোবাইল আর সিম কিনেন। নতুন সিম কিনে অফিসে গিয়েছি। তারা বলেছে টাকা চলে গেছে। কিন্তু আমরা ৭ মাস ধরে কোন টাকা পাই না।’
তাদের মতো আরমিন, ঝর্ণা আক্তার, সুফিয়া, মহসিন শরিফসহ শতাধিক প্রতিবন্ধীর ভাতা কোন নম্বরে কার নামে আসে জানে না কেউ। সদর উপজেলা অফিসে গিয়ে অফিসার মো. উজ্জ্বল মুন্সিকে না পেয়ে ওই অফিসের একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে সমাজ সেবার সার্ভারে দেখা গেছে, দুই থেকে এক কিস্তি প্রতিবন্ধীর বিকাশ নম্বরে ঢুকলেও পরবর্তী কিস্তিগুলো অন্য নম্বরে ঢুকেছে, যা ভাতাভোগীরা জানেন না।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আশাদুল ইসলাম বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল মামুন বলেন, ‘সুবিধাভোগী কারও কাছ থেকে লিখিত কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে অভিযুক্ত উজ্জ্বল মুন্সির বক্তব্যের জন্য একাধিক বার অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে একাধিকবার তার মোবাইলে কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।